যুদ্ধ-অস্ত্র
উন্নত ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ-অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন: বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'শান্তি ও অগ্রগতির জন্য মানুষের সংযোগই প্রাণশক্তি। ভবিষ্যতের সংকটের জন্য আমাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের অবশ্যই দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জিজিএফ কনফারেন্স ভেন্যুতে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩-এর উদ্বোধনী অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের আমন্ত্রণে এই ফোরামে অংশ নিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গ্লোবাল গেটওয়েকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বড় সংযোগকারী হিসেবে দেখতে চায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অংশীদার দেশগুলোর ৪০ জনেরও বেশি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা ২৫-২৬ অক্টোবরের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: উচ্চ পর্যায়ের সফরে ব্রাসেলসে প্রধানমন্ত্রী
তারা অবকাঠামো খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের চ্যালেঞ্জ, সর্বোত্তম অনুশীলন এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ইইউ বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন এবং হাই-টেক পার্কে সুযোগ-সুবিধা অনুসন্ধানের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ দেয়। ‘আমি ইইউ বিনিয়োগকারীদের আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর সুবিধাগুলো পরিদর্শন করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। নিরাপদ কাজ ও বহুমাত্রিক অর্থনীতি নিয়ে আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের ৩০০ কোটি গ্রাহকের বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার বেলজিয়াম সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সড়ক, রেল ও বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। দেশটি নেপাল, ভুটান ও উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থল-সংযুক্ত অঞ্চলগুলোতে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশ ও ইইউয়ের মধ্যে কানেক্টিভিটি একটি অভিন্ন বাধ্যবাধকতা।’
তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বাণিজ্য, উন্নয়ন ও মানবিক অংশীদার। ‘নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের গতিশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের ফলপ্রসূ সহযোগিতা রয়েছে। ইইউয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও অঙ্গীকার।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি ইউরো ঋণের জন্য আমরা ইআইবির সঙ্গে একটি যুগান্তকারী চুক্তি সই করেছি।’
বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে তিনি ইইউ'র সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরদারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) উত্তরণের জন্য বাণিজ্য অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখার জন্য ইইউ'র প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ১৫ বছরেরও কম সময়ে ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে। চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করবে।
তিনি বলেন, তার সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন স্কুল ভর্তি, কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন, বিনামূল্যে আবাসন, গ্রামীণ যোগাযোগ, দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু অভিযোজন, শতভাগ বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত, দেশব্যাপী ইন্টারনেট, শিল্প প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা জলবায়ু ঝুঁকি থেকে সহনশীলতা ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, পরিবহন নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, সবুজ জ্বালানি, ডিজিটাল রূপান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবনে গ্লোবাল গেটওয়ের মনোযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রশংসা করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য ইইউ'র অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকার চাই।’
তিনি বলেন, গ্রিন হাইড্রোজেনের প্রসারে বাংলাদেশ ইইউতে যোগ দিতে ইচ্ছুক। ‘সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারে ইইউয়ের দক্ষতা থেকে আমরা উপকৃত হতে পারি। আমাদের কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন নেটওয়ার্কগুলোতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্প উৎপাদনে বহুমুখীকরণে ইইউ'র প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে পারে। 'ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নিয়ে আমাদের আসন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আমরা অংশীদার খুঁজছিন।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী ইইউয়ের দক্ষতা ও প্রতিভা অংশীদারিত্ব কর্মসূচিতে যোগ দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, গ্লোবাল গেটওয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের 'স্মার্ট বাংলাদেশ' রূপকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।”
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ-ইইউ'র ৪০০ কোটি ইউরোর চুক্তি সই
১ বছর আগে