ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশানাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিক্ষার্থীদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়; অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব কার্যক্রমের সামগ্রিক মূল্যায়নের সুযোগ পায়। তাই প্রতিটি সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি বলেন, আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন গ্র্যাজুয়েটদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি ধন্যবাদ জানাই অভিভাবক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা শিক্ষায় আমরা একটু পিছিয়ে আছি। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষার দিকে জোর দিতে হবে। এছাড়া, দক্ষতা ও মূল্যবোধের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই আপনারা সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, অধিকতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার উচ্চশিক্ষার পরিধিকে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলিম দাদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান।
ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগির বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২’ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে গাবতলীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার মান এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কাতারের। বেতন ফি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উপাচার্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আলিম দাদ বলেন, ইইউবি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে শুরু থেকে ফল সেমিস্টার ২০২০ এর মধ্যে ৭৫৫৯ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রিলাভ করেছে। তারমধ্যে ৬৯৪৮ জন স্নাতক ও ৬১১ জন স্নাতকোত্তর।
আরও পড়ুন: ঢাকায় টেক্সাইল ট্যালেন্ট হান্ট ৮.০ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান বলেন, ইইউবি গরীব ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ কম খরচে এখানে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাফল্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, ২০১২ সালে শুরু করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনটি ফ্যাকাল্টি এবং ১২টি ডিপার্টমেন্টের কার্যজক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি স্থাপন করে প্রকৌশল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ প্রকৌশল বিভাগ সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়ত, অনুমোদন প্রাপ্তির ৪ বছরের মধ্যে সাড়ে পাঁচ লক্ষ বর্গফুটের সুবিশাল ১২ তলা ভবন স্থাপন করেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুরের গাবতলীতে।
তৃতীয়ত, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদানের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মেধা-সম্পন্ন ১৩০ জন শিক্ষক এবং শতাধিক কারিগরি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনেকগুলো নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে আসন সংখ্যা। আমি আশা করি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানে এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, ২০১২ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করলেও ২০১৬ সালে স্হায়ী জায়গায় ভবন তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও যেমন মানসম্মত, তেমনি মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষায় আমাদের আরও জোর দিতে হবে।
ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) প্রথম সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি ধন্যাবাদ জ্ঞাপন করছি। ইইউবি কম খরচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছে। কোভিড সময়েও তারা শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া। আশা করছি এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) প্রথম সমাবর্তনে ২০১২ থেকে ফল সেমিস্টার ২০২০ সময়কাল পর্যন্ত ৭৫৫৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং আটজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাইকার সেমিনার অনুষ্ঠিত
১ বছর আগে