বাহুবলী: দ্যা বেগিনিং
সর্বোচ্চ আয়কারী ১০ দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র
গল্প, সঙ্গীত ও অ্যাকশনে ভিন্নতা ধরে রেখে মূলধারার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখাটা সহজাত করে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ভাষা আর অবস্থানেই যেন আলাদা থাকছে তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রিগুলো।
অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ পর্দার পেছনের যাবতীয় কলাকুশলীদের সমন্বয় ঘটছে মুভির এই বাণিজ্যিক অঙ্গরাজ্যগুলোতে। ফলে প্রতিভাধর শিল্পীদের পরিপূরক নৈপুণ্যে প্রতিটি নির্মাণ ছাপিয়ে যাচ্ছে তার পূর্বসূরীকে।
এমনি সর্বোচ্চ আয়কারী ১০টি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়েই আজকের বিনোদন কড়চা। চলুন, কল্পনাতীত ব্যবসা সফল মুভিগুলোর প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা নেওয়া যাক।
যে ১০টি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের বক্স অফিস সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি
বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন (১,৮১০.৫৯৫ কোটি রুপি)
এই আয় অর্জন করে বাহুবলী ২ এখন পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী চলচ্চিত্রগুলোর তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। সংখ্যাটিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করলে দাড়ায় ২ হাজার ৩৮৫ দশমিক ৩৭৪ কোটি টাকা (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)।
অ্যাকশন ফিল্মটির পেছনে প্রথম কৃতিত্ব এসএস রাজামৌলির পরিচালনা, যিনি ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে ছবিটি যৌথভাবে রচনাও করেছিলেন। টলিউড মুভিটির শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন প্রভাস, রানা দাগ্গুবাতি, আনুশকা শেঠি, এবং রম্যা কৃষ্ণ।
সিনেমার কাহিনীতে দেখানো হয় অমরেন্দ্র বাহুবলীর মৃত্যুর কয়েক বছর পর, তার ছেলে ফিরে আসে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে।
সিনেমাটির নির্মাণ খরচ ছিল আনুমানিক ২৫০ কোটি রুপি, যা ৩২৯ দশমিক ৩৬৩ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমান। বাহুবলী ২ প্রেক্ষাগৃহে উন্মুক্ত হয়েছিল ২০১৭-এর ২৮ এপ্রিল। তেলেগুর পাশাপাশি তামিল ভাষাতেও শ্যুটিং হওয়াতে এটি এখন তামিল ও তেলেগু উভয় বক্স অফিসকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে।
দ্বিতীয় কিস্তির আয় প্রথমটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া মুভি সিরিজগুলোর মধ্যে এটির আয় সবচেয়ে বেশি।
বাহুবলী ২ সেরা ভিজুয়াল ইফেক্ট সহ মোট ৩টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।
আরও পড়ুন: ভারতের ৩ রাজ্যে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’
আরআরআর (১,৩১৬.৩০৫ কোটি রুপি)
দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরআরআর-এর এই সংগ্রহ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৭৩৪ দশমিক ১৭০ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমান। এই অ্যাকশন ড্রামা ফিল্মটিও এসএস রাজামৌলির নির্দেশনার এক অসামান্য উদাহরণ।
অভাবনীয় অভিনয়শৈলী দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন এন টি রামা রাও জুনিয়র, রাম চরণ, অজয় দেবগন, এবং আলিয়া ভাট।
এর গল্প নিজেদের লক্ষ্যে অটুট থাকা দুই ভারতীয় বিপ্লবীকে নিয়ে। তাদের গভীর বন্ধুত্ব ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের এক অনবদ্য সংমিশ্রণ এই মুভিটি।
৫৫০ কোটি রুপি (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা হিসেবে ৭২৪ দশমিক ৫৯৯ কোটি টাকা) বাজেটে তৈরি ছবিটি মুক্তি পায় ২০২২-এর ২৫ মার্চ।
আরআরআর এখন পর্যন্ত মুক্তির দিনে আয় করা দক্ষিণ ভারতীয় মুভিগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দিনটিতে ২১৩ কোটি রুপি বা ২৯৩ দশমিক ৭৯২ কোটি টাকা (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) তুলে নিতে সক্ষম হয় সিনেমাটি।
ছবির ‘নাটু নাটু’ গানটি সেরা মৌলিক গান হিসেবে অস্কার জয় করায় প্রথমবারের মত কোনও ভারতীয় সিনেমা অস্কার পাওয়ার রেকর্ড করে।
কেজিএফ: চ্যাপ্টার ২ (১,২০০ থেকে ১,২৫০ কোটি রুপি)
১৫৮০ দশমিক ৯৪৪ থেকে ১৬৪৬ দশমিক ৮১৬ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য এই উপার্জন কেজিএফ: চ্যাপ্টার ২ কে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রেখেছে। কিন্তু কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিতে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ধনী চলচ্চিত্র।
অ্যাকশন ফিল্মটির নির্দেশনা ও রচনা দু’ই করেছেন প্রশান্ত নীল। ছবিতে প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীরা হলেন যশ, সঞ্জয় দত্ত, রাবীনা ট্যান্ডন, শ্রীনিধি শেঠি, প্রকাশ রাজ, এবং রাও রমেশ।
কেজিএফের এই দ্বিতীয় কিস্তিতে রকির শত্রুরা কোলার গোল্ড ফিল্ডের রক্তহিম করা ঘটনা স্মরণ করে এখনও শিহরিত হয়। কিন্তু বিড়ম্বনা হচ্ছে- সরকার তাকে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
২০২২-এর ১৪ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া কেজিএফ: চ্যাপ্টার ২-এর বাজেট ছিল ১০০ কোটি রুপি, যা ১৩১ দশমিক ৭৪৫ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য।
দক্ষিণ ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার উৎসবে ফিল্মটি প্রধান চরিত্রে সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রী, এবং সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরষ্কার লাভ করে।
আরও পড়ুন: পরিচালনায় অরুণা বিশ্বাসের অভিষেক, মুক্তি পেল ‘অসম্ভব’
২.০ (৬৯৯.৮৯ কোটি রুপি)
চতুর্থ স্থান অধিকারি ২.০-এর এই আয় ৯২২ দশমিক ০৭২ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য। শুধুমাত্র তামিল ভাষায় নির্মিত মুভিগুলোকে যদি ধরা হয়, তাহলে এটি সেগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে।
মুভিটির পরিচালক এস শঙ্কর, যিনি বি জেয়ামোহন এবং মাধন কার্কির সঙ্গে ফিল্মটি রচনাও করেছেন। ২.০-এর প্রধান অভিনয়শিল্পীরা হলেন রজনীকান্ত ও অ্যামি জ্যাকসন, এবং এর মাধ্যমে কলিউডে অভিষেক ঘটে বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারের।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রটি রোবট চিট্টি এবং এক প্রাক্তন পক্ষীবিদ পাকশী রাজনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিয়ে। রাজন পাখীদের বাঁচানোর জন্য পৃথিবীতে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে চান।
২.০-এর আনুমানিক বাজেট ছিল ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি রুপি, যা ৫২৬ দশমিক ৯৮১ থেকে ৭৯০ দশমিক ৪৭২ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য। এই সংখ্যাটি ২.০ কে এখন পর্যন্ত কলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে দামী চলচ্চিত্র। মুভিটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর।
আনন্দ বিকাশ সিনেমা পুরস্কার অনুষ্ঠানে সিনেমাটি সেরা অ্যানিমেশন ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সহ মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার জিতেছিল।
জেলর (৬০০ কোটি রুপি)
রজনীকান্ত অভিনীত এই মুভিটির আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৯০ দশমিক ৪৭২ কোটি টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) সমান।
অ্যাকশন কমেডি চলচ্চিত্রটির পরিচালক ও রচয়িতা নেলসন দিলীপকুমার। ছবিতে রজনীকান্তের প্রধান সহশিল্পীরা ছিলেন বিনায়কান, রম্যা কৃষ্ণ, বসন্ত রবি, এবং তামান্না ভাটিয়া।
সিনেমাটি একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের গল্প বলেছে। তিনি এক উদ্ভট মূর্তি পাচারকারীকে পাকড়াও করতে নিজের পুরনো অভিজ্ঞতাকে নতুন করে শান দিতে শুরু করেন।
আনুমানিক ২০০ থেকে ২৫০ কোটি রুপি বা ২৬৫ দশমিক ৭০৬ কোটি টাকা (১ রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করা হয়েছিল এর নির্মাণে। সিনেমাটির মুক্তির তারিখ ছিল ২০২৩-এর ১০ আগস্ট।
আরও পড়ুন: নতুন জুটির ‘মেঘের কপাট’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল
১ বছর আগে