সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত 'পিপ্পা' সিনেমা
নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ বিতর্ক: ক্ষমা চাইল পিপ্পা টিম
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত 'পিপ্পা' সিনেমায় ব্যবহৃত বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানটির বিকৃতি নিয়ে দুই বাংলায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর এবার ক্ষমা চেয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতারা।
সোমবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে প্রোডাকশন হাউস রায় কাপুর ফিল্মস কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট'গানটি এ আর রহমানের পরিবেশনের বিতর্কের বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ইশান খট্টর, মৃণাল ঠাকুর, প্রিয়াংশু পাইনুলি ও সোনি রাজদান প্রমুখ অভিনীত ছবিটি ১০ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধকে তুলে ধরা হয়েছে।
আরএসভিপি মুভিজ এবং রায় কাপুর ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিতে নজরুলের গান 'কারার ঐ লৌহকপাট' -এর রিমেক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: কারার ঐ লৌহকপাট বিতর্ক: কাজী নজরুল ইসলামের নাতনির প্রতিবাদ
অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানের রিমেক সংস্করণে অভিনয় করেছেন ভারতীয় গায়ক রাহুল দত্ত, তীর্থ ভট্টাচার্য, পীযূষ দাস, শ্রায়ী পাল, শালিনী মুখার্জি ও দিলাসা চৌধুরী।
গানটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ শ্রোতাদের পাশাপাশি নজরুল সংগীতশিল্পী ও ভক্তরা রিমেক নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ছবির নির্মাতারা বলেন, ‘আমরা শ্রোতাদের আবেগ বুঝতে পারছি। মূল রচনার প্রতি তাদের একটা অন্য আবেগ রয়েছে। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিকে ঘিরে নানা আলোচনা চলেছে চারিদিকে। পিপ্পা ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত সুরকাররা বলেছেন, গানটির উপস্থাপনাটি একটি আন্তরিক শৈল্পিক ব্যাখ্যা, যার পিছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না। এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের থেকে যাবতীয় স্বত্ব নিয়ে তবেই গানটির পর্যালোচনা করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রয়াত কল্যাণী কাজীর সই নিয়ে এবং অনির্বাণ কাজীকে সাক্ষী রেখে গানটির জন্য লাইসেন্স চুক্তির চিঠি উভয়ই নিয়েছি আমরা।’
নির্মাতারা বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল চুক্তিতে উল্লেখ করা শর্তাবলী মেনে চলার সময় গানের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এর পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘আমাদের মূল রচনা এবং প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত, রাজনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে যার অবদান অপরিসীম। এই অ্যালবামটি তৈরি করা হয়েছিল সেই নারী-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, যারা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য এবং তার স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের অনুভূতির কথা আমরা ভুলিনি।
এর আগে শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গানটির 'বিকৃতির' বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল,কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি মিষ্টি কাজী, নজরুল শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক, বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ, সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ‘কারার ঐ লৌহকপাট’: দুই বাংলায় তোপের মুখে এ আর রহমান
১ বছর আগে