শ্রম-মানবাধিকার
শ্রম-মানবাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান ইইউ প্রতিনিধি দলের
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ও চর্চা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে জোরদার করার সুপারিশ করেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল।
শ্রম খাতের উপর জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে পর্যবেক্ষক মিশন। বিশেষ করে সমিতির স্বাধীনতা, সম্মিলিত দরকষাকষি এবং ত্রিপক্ষীয় পরামর্শের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় মিশনটি।
ইইউ কর্মকর্তারা পোশাক খাতে নিরাপত্তার মানোন্নয়নের অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার উন্নয়নে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়নে ইইউ প্রতিনিধি দল ঢাকায়
এক বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, 'শ্রম ও মানবাধিকার উভয় ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’
এতে বলা হয়, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর), মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সুশীল সমাজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার মতো মূল ইবিএ কনভেনশনগুলো মেনে চলার জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২০২৩ সালের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) সুপারিশ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে ইইউ।
'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) বাণিজ্য ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার পূরণের বিষয়টি মূল্যায়ন করতে ঢাকায় অবস্থান করছে ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন।
ইবিএ ব্যবস্থা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়, যা ইউরোপীয় বাজারে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সম্পর্কিত মূল কনভেনশনগুলোকে সম্মান করে।
বাংলাদেশ ইবিএর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে দেশটির রপ্তানি ২৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পাম্পালোনি এবং এতে কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
পর্যবেক্ষক মিশন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড ও বিজিএমইএ'র সঙ্গে বৈঠক করে।
মিশন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশ শ্রম আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনীগুলো ইইউ ও আইএলও'র উদ্বেগের আংশিক সমাধান করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটে ‘নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে’ ইইউ: রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি
এসব লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের আরও সংশোধনী দ্রুত প্রবর্তনের জন্য সরকারের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানায় মিশন।
ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের (ন্যাপ) অধীনে সম্মত সময়সূচিতে বিলম্বের কথা উল্লেখ করে ইইউ দলটি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ত্বরান্বিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাওলা পাম্পালোনি বলেন, বাংলাদেশ সফর ইবিএ ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত অংশ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার পূরণের গুরুত্ব সম্পর্কে মূল অংশীজনদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার একটি মূল্যবান সুযোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'প্রয়োজনীয় সংস্কার ত্বরান্বিত করতে আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাব।’
ইইউ বাংলাদেশ সরকার এবং সকল অংশীজনদের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে ইবিএ কমপ্লায়েন্সের বর্ধিত মনিটরিং প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে।
ইবিএ শর্তাবলী মেনে চলার বিস্তারিত মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত ইইউ'র পরবর্তী জিএসপি প্রতিবেদনটি নভেম্বরের শেষে প্রকাশিত হবে।
২০২৪ সালের বসন্তে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনে সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে ইইউ।
আরও পড়ুন: মজুরি নয়, অধিকারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে সফররত ইইউ প্রতিনিধি দল: পররাষ্ট্র সচিব
১ বছর আগে