৫ মাস
৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না গোয়াইনঘাটের ১৯ স্বাস্থ্যকর্মী
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৯ জন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ১৯ জন হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
পওনা বেতনের দাবিতে আগস্ট মাসে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনও করের সিএইচসিপিরা। তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে পদটি স্থানান্তরে জটিলতার কারণে বেতন বন্ধ রয়েছে সিএইচসিপিদের।
তোয়াকুল ইউনিয়নের পূর্ব পেকেরখাল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি অদথ্য দাস বলেন, ‘আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছি। অথচ সেই আমরাই অর্থকষ্টে ভুগছি।’
নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের কচুয়ারপার কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সোহেল আহমদ বলেন, ‘পাঁচ মাস নিয়মিত কাজ করেও বেতন পাচ্ছি না। সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কবে বেতন পাব তাও অনিশ্চিত। দ্রুত বকেয়া বেতনসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের হান্নান সিদ্দিকী বলেন, ‘উন্নয়ন খাত থেকে চাকরি রাজস্ব খাতে যেতে স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন, যা গত পাঁচ মাসেও হয়নি। যে কারণে আমরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহআলম স্বপন বলেন, ‘শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলায় নয়, সারা দেশে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ রয়েছে।’
৪ সপ্তাহ আগে
রাজবাড়ীতে ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ৫ মাস ধরে বেতন বন্ধ!
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের ২৫জন শিক্ষক-কর্মচারী জুলাই মাস থেকে বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। বেতন ছাড় করতে প্রধান শিক্ষক এক মাসের টাকা দাবি করেন।
প্রতিকার চেয়ে ইউএনও, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের।
আরও পড়ুন: ২ মাস বেতন-ভাতা বন্ধ ১৭০ জন চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীর
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আ. লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৬ জুলাই পদত্যাগ করেন।
শিক্ষকরা ইউএনও’র মাধ্যমে জানতে পারেন সভাপতির পদত্যাগপত্র শিক্ষাবোর্ডে গৃহীত হয়নি, পূর্বের কমিটি বহাল রয়েছে।
এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফকীর আব্দুল কাদেরের কাছে বেতন-ভাতার বিলে সইয়ের অনুরোধ করলে তিনি সভা ডেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে এক মাসের বেতন (প্রায় ৬ লক্ষ) দাবি করেন এবং এরপর তিনি বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন বলে প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবে শিক্ষকরা অস্বীকৃতি জানালে প্রধান শিক্ষক বেতন-ভাতার বিলে সই করেনি। ফলে বিদ্যালয়ের সাধারণ ও ভোকেশনাল শাখার ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী জুলাই থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫ মাসের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, গত ১৬ নভেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি বেতন-বিলে সই করেননি।
এসময় শিক্ষক-কর্মচারিরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, জাত-পাত তুলে গালমন্দ, গায়ে হাত তোলা, নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের আয়ের সমুদয় অর্থ নয়ছয় করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার সাহা বলেন, তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ খেতে পারছেননা, সংসারের চাহিদাও মেটাতে পারছেননা। বাজারের দোকানীরা বাকি দিতে চাচ্ছেননা।
তিনি আরও বলেন, মনোকষ্টে যেকোনো সময় স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। প্রধান শিক্ষক যেনতেন কারণে তাদের জাত-পাত তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে গায়ে হাত তোলেন। তার দুর্ব্যবহারের কারণে কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। নিঃসন্তান বলে অসহায় স্ত্রীর কথা ভেবে আত্মহত্যা করিনি।
দীপালী রায় নামের আরেক শিক্ষক জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই এই স্কুলে কর্মরত। তাদের বড় ছেলেটা রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) পড়ালেখা করছে। বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের পাশাপাশি ছেলেটাও নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। যে কারণে নিরুপায় হয়ে ইউএনও’র নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
আরও পড়ুন: সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নে প্রস্তুত বিজিএমইএ: ফারুক হাসান
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জুলাই থেকে চলতি নভেম্বর পর্যন্ত বেতন-ভাতা না পাওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতরভাবে দিন পার করছেন। ম্যানিজিং কমিটির সভাপতির পদত্যাগপত্র বোর্ডে যায়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও আমাকে ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। প্রধান শিক্ষক ঢাকায় থাকায় তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আসলে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফকীর আব্দুল কাদের বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদত্যাগপত্র বোর্ডে জমা পড়ায় জটিলতা দেখা দেয়। ফকীর আব্দুল জব্বার সভাপতি বহাল থাকার কাগজপত্র বোর্ড থেকে হাতে পেলেই বেতনবিলে সই করব। শিক্ষকদের কাছে এক মাসের বেতনের টাকা চাওয়ার অভিযোগ সত্য না।
ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেই শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন, আইডিয়াল হাইস্কুলের সভাপতির পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়নি।
তিনি বলেন, তিনি স্বপদে বহাল আছেন এবং বেতন বিলে সই করতে পারবেন। বিষয়টি সভাপতিকে জানানোর পর তিনি বেতন বিলে সই করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে সমাধান হয়নি। শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছে। এলাকায় ফিরলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সাভারে পুলিশ-পোশাকশ্রমিক সংঘর্ষে আহত ১৫
১ বছর আগে