উপাত্ত
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় নির্বাচনকালীন সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন টিআইবি’র
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সত্ত্বেও মন্ত্রিসভা খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩-এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়ায় গভীর বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলেছে, এই আইনের সুদূর প্রসারী প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই এবং বেশ কিছুদিন ধরে ধাপে ধাপে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই খসড়াটি মন্ত্রীসভার অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক সংবাদ বিবৃতিতে নির্বাচনকালীন সরকারের এধরনের নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত কী না এ প্রশ্নও তুলেছে টিআইবি।
আলোচ্য আইনের খসড়াতে টিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের পরামর্শের ভিত্তিতে কয়েক ধাপে বেশকিছু ইতিবাচক সংশোধনী আনা হয়েছে।
তবে তড়িঘড়ি করে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগেই প্রশ্নবিদ্ধভাবে মন্ত্রীসভার ‘নীতিগত’ অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের মতো একটি জনগুরুত্বসম্পন্ন-বিষয়ক আইনকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবসম্মত আইনের পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘খসড়া আইনটিতে ব্যক্তিগত উপাত্তের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত করা; বিচারিক নজরদারির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা এবং সর্বোপরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদারকি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ বেশকিছু সুপারিশ আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম।’
আরও পড়ুন: নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণে উদ্বেগ প্রকাশ টিআইবির
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীগণ বিভিন্ন সময় আমাদের আস্বস্ত করেছেন, অংশীজনের পরামর্শ বিবেচনা করেই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি অবস্থায় খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন পেল বা আদৌ তাতে জনস্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে কি-না তা জানার সুযোগ আমাদের দেওয়া হলো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যতটুকু তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে নিশ্চিত করা হয়েছে, তদারকি কর্তৃপক্ষ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকার নিজেই সবচেয়ে বড় উপাত্ত প্রক্রিয়াকারী হওয়ার পরও ব্যক্তি উপাত্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাওয়া বোর্ডকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা চরম স্ববিরোধিতা। কারণ এই বোর্ড তখনই যথাযথভাবে কাজ করতে পারবে, যখন তা সরকারের উপাত্ত প্রক্রিয়া কার্যক্রমের উপর নজরদারি করতে পারবে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাশাপাশি জনগণের তথ্যে সরকার বা সরকার সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবানদের যে যথেচ্ছ প্রবেশাধিকার থাকবে না সেটাও এই বোর্ডকে নিশ্চিত করতে পারতে হবে। যার এখতিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন বোর্ডের থাকবে-এরূপ প্রত্যাশা করা অবান্তর। এই একটা উদাহরণ থেকেই বলা যায় যে খসড়াটিতে মৌলিক দুর্বলতা রয়ে গেছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘আমাদের আরও একটি বড় আপত্তির জায়গা ছিল অতিমাত্রায় বিধিনির্ভরতা, যা আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের আশঙ্কাকেও জোরদার করে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার তার কার্যক্রম দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে এবং নীতি সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য তুলে রাখা হবে-এই নিয়মের ব্যত্যয় করে গৃহীত মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত কি-না সেই প্রশ্ন তোলা অবান্তর হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাকরি নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত এই খসড়া চূড়ান্ত করার পরবর্তী সব কার্যক্রম সরকার স্থগিত করবেন এবং নির্বাচন পরবর্তী সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য খসড়া প্রস্তুত করে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবেন।’
আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রত্যাখ্যান করেছে টিআইবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল টিআইবি
১ বছর আগে