সাধারণত
সাধারণত জঘন্য অপরাধে আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়: হাইকোর্ট
জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ জঘন্য অপরাধে জড়িত আসামিদের সাধারণত ডান্ডাবেড়ি পরানো হয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি অসুস্থ আমিনুর রহমানকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত এ মন্তব্য করেন।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি নজরে আনেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।
আরও পড়ুন: হাইকোর্ট এলাকায় বাসে আগুন
তিনি আদালতের কাছে সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) আদেশ প্রার্থনা করেন।
একপর্যায়ে আদালত বলেন, জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণত অপরাধীকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক সিদ্ধান্তও রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে সে বিষয়ে গাইডলাইন (নির্দেশিকা) রয়েছে।
আদালত আরও বলেন, এ বিষয়ে সুয়োমোটো আদেশ দেব না। চাইলে আপনারা আবেদন নিয়ে আসতে পারেন।
এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ছিলেন— আইনজীবী কায়সার কামাল, এম বদরুদ্দোজা, মো. রুহুল কুদ্দুস।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে যুবদল নেতাকে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে রিট দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের মেঝেতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক ব্যক্তি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দুই পা ভাঁজ করে শুয়ে আছেন। ডান্ডাবেড়ি থাকায় দুই পা সোজা করতে পারছেন না।
এক হাতে ঝুলছে হাতকড়া। অন্য হাতে ইনজেকশনের ক্যানোলা। দুই পায়ের মাঝখানে ঝুলছে ক্যাথেটার। রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব সেখানে জমা হচ্ছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে নিয়ে এসে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে। তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে, যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।
ছবির ওই ব্যক্তির নাম আমিনুর রহমান মধু। তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। এ ছাড়া তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক।
আরও পড়ুন: তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট
এদিকে অসুস্থ আমিনুরের পরিপূর্ণ চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের। আর কারা পুলিশের এমন অমানবিক কাণ্ডে মর্মাহত তার পরিবার ও স্বজনরা।
এরূপ আচরণ সমীচীন নয় বলে অভিমত জানান আইনজীবীরা।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে দুটি বাস থেকে ককটেল, লাঠি ও পেট্রোল জব্দের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৮৭ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
ওই মামলায় আসামি যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু। এরপর হরতাল–অবরোধে নাশকতার আরও দুই মামলার আসামি হন তিনি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে যান। কিন্তু ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া এমনভাবে লাগানো, যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোনো সুযোগ নেই।
চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পুলিশের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বিছানা পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে আমিনুর রহমান মধুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করা হয়।
তার বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো। স্বজনদের তার সান্নিধ্যে যেতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি সময়মতো ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনেরা।
আরও পড়ুন: সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা: ধারাভাষ্য থেকে ওয়াকারের নাম প্রত্যাহারে হাইকোর্টের রুল
১১ মাস আগে