গোলটেবিল
বাংলাদেশের প্রয়োজন 'ব্যাপক ও দূরদর্শী' নিরাপত্তা এজেন্ডা: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ এখন যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি তা কার্যকরভাবে মোকাবিলায় একটি ‘বিস্তৃত ও দূরদর্শী নিরাপত্তা এজেন্ডা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) 'বাংলাদেশ ২.০: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা এজেন্ডা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদ থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের সঙ্গে গণতন্ত্রের সহজ ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথম যে কাজটি হাতে নেওয়া দরকার তার মধ্যে একটি হচ্ছে সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশসহ নিরাপত্তা খাতের ব্যাপক সংস্কার।
মিয়ানমারের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে ও লিবিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক, বিআইপিএসএস সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনির এবং ডেইলি স্টারের সাবেক সহযোগী সম্পাদক ও ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহেদুল আনাম খান গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন।
শহীদুল হক বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার পাশাপাশি এই ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কী নীতি গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করবে দিল্লি
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশকে এমন একটি নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে, যা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ও বাণিজ্য রুট নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির মতো অরাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবে তা নির্দেশ করে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মিয়ানমার সংকটকে বাংলাদেশের কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত সে বিষয়েও কথা বলেন শহীদুল হক।
সব দেশের সঙ্গে আলোচনার সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখবে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
শাফকাত মুনির সার্বক্ষণিক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) এবং পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বিত সচিবালয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন, এই জাতীয় সচিবালয়ের ডোমেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থাকা দরকার।
মুনির সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তার মতো নতুন ও উদীয়মান হুমকি মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকি ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়নের এখনই উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা এজেন্ডা পুনরুজ্জীবিত না হলে 'বর্ষা বিপ্লবের' আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না। তিনি বাংলাদেশ ২.০ এর বিশ্বব্যাপী সমর্থন আদায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিদেশে বাংলাদেশের ব্যাপক কার্যক্রম বিশেষ করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামরিক সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মুনির।
তিনি বাংলাদেশে সামরিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও কথা বলেন। নিরাপত্তা খাতের সম্পূর্ণ বিরাজনীতিকরণের প্রয়োজনীয়তার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন মুনীর।
শাহেদুল আনাম খান তার নিজের মন্তব্যে সর্বপ্রথম শ্রোতাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন বিপ্লব ঘটানোর প্রয়োজন।
তিনি নিরাপত্তা এজেন্ডা নিয়ে কথা বলার আগে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, 'দেশের মানুষ সুরক্ষিত না হলে জাতি গঠন হতে পারে না।’
সবকিছুর ঊর্ধ্বে জনগণের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সুশাসন ছাড়া কোনোভাবে নিরাপত্তা বজায় রাখা যায় না।
তিনি আরও বলেন, হাসিনা সরকারের সুশাসনের কোনো বৈশিষ্ট্যই ছিল না।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনাম বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সেবক, প্রভু নন এবং তাদের পরিচালনা করতে হবে, শাসন নয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার ও রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ বিরাজনীতিকরণ হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, দোষ এজেন্সিগুলোর নয় বরং হাসিনা সরকারের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের। যারা তাদের নিজের স্বার্থে এগুলোর অপব্যবহার করেছে।
প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতিবিষয়ক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ (অবসরপ্রাপ্ত) গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
সঞ্চালক মুনিরুজ্জামান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সংসদীয় তত্ত্বাবধান পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বিশেষ করে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গণতান্ত্রিক তদারকির ওপর জোর দেন, যাতে আর কখনো আয়নাঘরের মতো অতীতের ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি না করতে হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে অবশ্যই নতুন ও উদীয়মান হুমকি যেমন হাইব্রিড যুদ্ধ এবং 'গ্রে জোনে' লড়াই করার সক্ষমতা থাকতে হবে। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন।
এক আলোচনা পর্বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ, সীমান্ত নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কৌশলের গুরুত্ব, জাতি যে বিশাল ঋণের মুখে পড়েছে তা কীভাবে মোকাবিলা করবে ইত্যাদি বিষয় উত্থাপিত ও আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, রাষ্ট্রদূত, সিনিয়র কূটনীতিক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষাবিদ এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন-মোদির আলোচনা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় গুরুত্বারোপ
৩ মাস আগে
দেশে ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক
বাংলাদেশে ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘চলপড়ি’র উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই বৈঠকে বিভিন্ন এনজিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
‘স্কেলিং ব্লেন্ডেড লার্নিং ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী এবং চলপড়ির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরীন মাহমুদ হোসেন।
আরও পড়ুন: তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে হাছান মাহমুদের বৈঠক
অনুষ্ঠানে হাটহাজারী উপজেলার ৫৬টি স্কুলে ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের উপর চলপড়ির পরিচালিত প্রকল্পের ফলাফল তুলে ধরা হয়।
সেখানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজির ফলাফল এবং ক্লাসে অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
বৈঠকে উঠে আসে ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের বিস্তার ও দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা।
এছাড়া বাংলাদেশে তুলনামূলক নতুন এই পদ্ধতিটির সঙ্গে পরিচয়ের জন্য যথাযথ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও শিক্ষা কার্যক্রমে অভিভাবকদের সংযুক্তি নিয়েও আলোচনা করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, শিক্ষক যখন বলবেন ‘আই অ্যাম দ্য সলিউশন’, তখনই ডিজিটাল এডুকেশন আর ব্লেন্ডেড লার্নিং বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব থেকে সরকারকে আমরা সরে যেতে দেব না। আর সেজন্য শুধু সফলতার গল্প নয়, আমাদের প্রমাণনির্ভর অ্যাডভোকেসি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমকে সফল করতে হলে অন্য সব অংশীজনের মতো আমাদের অভিভাবকদের কথাও শুনতে হবে। তারা এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
চলপড়ির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরীন মাহমুদ হোসেন বলেন, ব্লেন্ডেড লার্নিং ও পিয়ার টু পিয়ার লার্নিংয়ের মাধ্যমে আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি, যা হবে সময়োপযোগী, দায়িত্বশীল ও লক্ষ্যনির্ভর।
বৈঠকে ব্লেন্ডেড লার্নিং বাস্তবায়নের একটি আনুষ্ঠানিক ও কাঠামোগত নীতিমালা তৈরির আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
সেইসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এই লক্ষ্যে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন বক্তারা।
চলপড়ি সম্পর্কে
বাংলাদেশি ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চলপড়িতে আছে জাতীয় শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে তৈরি ইংরেজি ও গণিতের মজার মজার মাল্টিমিডিয়া লেসন, প্র্যাকটিস সেট ও রং-বেরঙের বই।
বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিশুর মাঝে মানসম্পন্ন ও আনন্দদায়ক শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিতে ২০২০ সাল থেকে কাজ করছে চলপড়ি।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে ওআইসি বৈঠকে যোগ দিতে জেদ্দায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইসরায়েলি আগ্রাসন বিষয়ক ওআইসির বৈঠকে যোগ দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৯ মাস আগে
কর্মক্ষেত্র-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এবং জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা, ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- কর্মজীবী নারী, বিএফএলএলএফইএ, বিজিটিএলডব্লিওএফ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স, বিটিজিডব্লিওএল, ব্লাস্ট, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি, ফুলকি, নারী মৈত্রী, সবুজের অভিযান, ইটিআই, এলএফএমইএবি, পংক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিলস্, সলিডারিটি সেন্টার, উইমেন এন্ড ই-কমার্স এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মজীবী নারী’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে কি না সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাহস দিতে হবে, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়াতে পৃথকভাবে এই বিষয়ক কর্নার খোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে হবে।
ডিবিসির সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়াস চালাতে হবে এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব
কুতুব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে প্রতিটি কারখানায় অ্যান্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা এবং আইন প্রয়োগের প্রতি জোর দিতে বলেন।
জাতীয় শ্রমিক জোটের জেনারেল সেক্রেটারি নাঈমুল আহসান জুয়েল জানান, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনার পাশাপাশি মাঠে নামতে হবে এবং বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে প্রসার ঘটাতে হবে। বিষয়টিকে তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ন্যাশনাল ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্বলিত একটি পৃথক আইন করা দরকার।
বিএফএলএলএফইএ’র সচিব জয়নাল আবেদীন প্রচলিত আইনটির প্রয়োগের উপর জোর দিতে এবং কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিকতার পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
জান্নাত ফেরদৌস পান্না বেগম বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়ে যে মামলাগুলো ইতোমধ্যে হয়েছে, তার হাল অবস্থা জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটির পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার জায়গা তৈরি করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। গণপরিবহন ও রাস্তাঘাটে নারীরা যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা বা উচ্চশিক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান মনডিয়াল এফএনভি কনসালটেন্ট শাহিনুর।
সাংবাদিক আতাউর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে কি না এবং কমিটির মিটিং হয় কি না সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। কমিটি কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে না যাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি করেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। কেবল শ্রমিককেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্র নয় বরং সব কর্মক্ষেত্রে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
১ বছর আগে