অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী
‘ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতিতে আমলাতন্ত্রই বড় বাধা’
ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতিতে আমলাতন্ত্রই বড় বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অচিরেই বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ করা জরুরি। গত ২০-২৫ বছরে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিতে প্রচুর অর্থ খরচ করা হলেও প্রস্তুতিতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গলদ আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এক্ষেত্রে বড় বাধা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার এফডিসিতে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মেহেদী আহমেদ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে সবাই আমলা। সেখানে কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা জিওলোজিস্ট নেই। আমলারা দক্ষ জনবলের কথা আমলে নিই না। রাজউকে এখনও অনিয়ম রয়ে গেছে। এখানে দুর্নীর্তি হচ্ছে, টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বিগত সময়ে যে দুনীর্তি হয়েছে আজ তা সংশোধন করা কঠিন। ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেমের (ইসিপিএস) মাধ্যমে রাজউকের নকশার অনুমোদন শুরু করা ইতিবাচক। কিন্তু এক্ষেত্রে এখনও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ঢাকা শহরে ২১ লাখ ভবনের মধ্যে অকুপেন্সি সনদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭০-৮০টিকে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারলেও ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নগরের ৬৫ শতাংশ ভবনই দুর্বল মাটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে। যা ভবন নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম কারণ। ভবন নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না তা নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে।
আরও পড়ুন: টেকসই উন্নয়নে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনার আহ্বান ইউজিসি চেয়ারম্যানের
তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন পেতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। নির্মাণ শেষে বিল্ডিংয়ের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পেতেও বেশ কষ্ট হয়। এমনকি নকশা অনুমোদন ও বিল্ডিং কোড মানার ক্ষেত্রে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। ভবন নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে ভবন মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত।
চৌধুরী কিরণ আরও বলেন, শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের সব জায়গায় ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যতক্ষণ পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই। ভবন মালিকের ক্যাপাসিটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় ১০ দফা সুপারিশ করেন। যথা-
১) বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা
২) ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহশীলতা নির্দেশিকা মানতে বাধ্য করা
৩) ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা চিহ্নিত করে এগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করা
৪) ভবন নির্মাণে সব উপকরণ পরীক্ষার জন্য রিসার্চ, ট্রেনিং ও টেস্টিং ল্যাবরটরি স্থাপন নিশ্চিত করা
৫) ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাস ও উদ্ধার তৎপরতা জোরদারের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো
৬) ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কিত তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জানানো
৭) প্রতি তিন মাস পরপর ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহের সমন্বয় ও প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা এবং মহড়া নিশ্চিত করা
৮) ভবন নির্মাণে নকশার ব্যত্যয় রোধে ভবনের অনুমোদিত নকশা অনলাইনে দেওয়া
৯) বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ ও ব্যয় নির্বাহের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা
১০) রাজধানীর প্রতি ওয়ার্ডে আরবান রেসকিউ টিম তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষিত করা।
‘ভবন মালিকদের দায়িত্বশীলতাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে’- শীর্ষক ছায়া সংসদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক শাহরিয়ার অনির্বাণ ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিষণ্ণতায় ভুগছেন ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী: গবেষণা
বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তালিকায় গাজীপুরের বশেমুরকৃবি
১০ মাস আগে