বিলুপ্ত হবে
'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজনীতি বিলুপ্ত হবে'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুবধার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'দেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি আর থাকবে না। উদার গণতন্ত্রকে ভুলে যাওয়া উচিত।’
'ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ- নির্বাচন, অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'কেউ কেউ বলতে চান, জনগণ অংশগ্রহণ করলেই এটি অংশগ্রহণমূলক। তাহলে আমরা কেন স্বৈরশাসকদের প্রশ্ন করছি? অংশগ্রহণমূলক মানে সেই সব দলের অংশগ্রহণ, যারা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, 'যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা সিস্টেমকে কলুষিত করেছে, যেখানে ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ দেখানো হচ্ছে। ভোটের হার বিশ্বাসযোগ্য হোক বা না হোক, তা কোনও ব্যাপার নয়।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে ইনসানিয়াত বিপ্লবের করা রিটের শুনানি বুধবার
আগামী নির্বাচনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়বে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে 'বিরোধী দল খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া' আখ্যায়িত করে সাখাওয়াত বলেন, ২৬টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে ১৩টির নাম কেউ বলতে পারছে না।
তিনি বলেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর ক্ষমতাসীন দলের জন্য ২৪০টি আসন নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাখাওয়াত মনে করেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের 'নতুন সংজ্ঞা' তৈরি হচ্ছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের ফলাফল তার আবেদন হারিয়েছে।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের সহায়তা ছাড়া নির্বাচিত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে শক্তিশালী রাজনৈতিক বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে মৌলবাদী শক্তির উত্থান হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের কর্তৃত্ব হারিয়েছে, যার ফলে দুর্নীতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজনীতি সঠিক পথে চললে অর্থনীতি সঠিক পথে চলবে।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে: সিইসি
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার অর্থনীতির এমন কিছু সূচক দিচ্ছে, যা বাস্তব চিত্রের সঙ্গে মেলে না।
জিডিপি শতাংশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিডিপির পরিসংখ্যান কর্মসংস্থান, কর-জিডিপি এবং রাজস্ব সংগ্রহের পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলে না।
মনসুর বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে সরকার ও বেসরকারি খাতকে সহায়তা করার সক্ষমতা হারাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, আগামী নির্বাচনে সরকারি দলের পরাজয়ের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন। গত ৫২ বছরে এই পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। অসাধু ব্যবসায়ী, অসাধু রাজনীতিবিদ ও আমলারা একটি চক্র গঠন করেছে। এই চক্র ভেঙ্গে না দিয়ে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।’
কবির মনে করেন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার একদলীয় নির্বাচন করতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. আবদুল মজিদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, আইন-ও-সালিশ কেন্দ্রের ফারুক ফয়সাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
আরও পড়ুন: যেকোনো দল শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলতে পারে: ইসি আলমগীর
১ বছর আগে