সিলেট-২
সিলেট-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াই। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
মন জয়ের নানা চেষ্টা করছেন তাদের। আসনটিতে কাগজে-কলমে প্রার্থী সাতজন হলেও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছেন মাত্র তিনজন।
তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা); জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া (লাঙল) এবং গণফোরাম মনোনিত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য)।
এ আসনের তৃণমূল বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনিত প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসেন (আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনিত প্রার্থী মো. জহির (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ট্রাক) তেমন কোনো আলোচনায় নেই।
আরও পড়ুন: বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা-গুলির অভিযোগ
যার ফলে ভোটের মাঠে নৌকা, লাঙল ও উদীয়মান সূর্য প্রতীকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাচ্ছেন ভোটাররা। অনেক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ২৩ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত ও গণফোরাম মনোনিত প্রার্থী মোকাব্বির খান।
ওই নির্বাচনে জামানত হারান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত ও জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া।
এছাড়া, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনিত হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের কারণে সিলেট-২ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফলে, টানা এক দশক চরম হতাশায় ছিল ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গার দুই আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা জাপার দুই প্রার্থীর
তবে, এবার আসনটি ভাগাভাগির কবলে না পড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী থাকায় তাদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। সাধারণ সমর্থকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস।
যেকোনো মূল্যে আসনটি পূণরুদ্ধার করতে দলীয় প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও নেতা-কর্মীরা দিন-রাত অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, টানা দুই নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়া হলেও এবার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় কিছুটা হতাশ দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
তাদের প্রত্যাশা, শেষ পর্যন্ত পুরো উদ্যমে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন সবাই। ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে নির্বাচিত করে উদ্ধার করবেন হারানো দূর্গ।
তবে, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে গণফোরামের উল্লেখ করার মতো কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নেতা-কর্মী না থাকায় পাঁচ বছরে নিজের করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অবলম্বন করেই মাঠে-ঘাটে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান।
সবমিলিয়ে বর্তমান ও সাবেক তিন সংসদ সদস্যের প্রচার-প্রচারণায় ধীরে ধীরে সরগরম হয়ে উঠা সিলেট-২ আসনের ভোটাররা মুখিয়ে আছেন শেষ পর্যন্ত কে হন তাদের কান্ডারি-সেটা দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: সিলেট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় হামলার অভিযোগ আ. লীগ প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে
১০ মাস আগে
সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অবশেষে প্রতীক পেলেন
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে প্রতীক পেয়েছেন সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান মুহিব।
তার পছন্দের প্রতীক ছিল ‘ট্রাক’। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মুহিব এই প্রতীকই চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সেটি তাকে বরাদ্দ দিয়েছে ইসি।
মুহিবকে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সার্বিক সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।
এর আগে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ৪ ডিসেম্বর মুহিবুরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে ১৫ ডিসেম্বর তার আপিল নামঞ্জুর করা হয়। প্রার্থিতা ফিরে পেতে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
পরে ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতি ইকবাল কবির ও বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান মুহিবুর রহমান। তবে মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: সিলেটে প্রতীকের দাবিতে ডিসি অফিসের সামনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মুহিবের অবস্থান
এর আগে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা শুরু করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিব। তিনি ‘ট্রাক’ প্রতীকের পোস্টার ও ব্যানার ছাপিয়ে সেগুলো বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে শুরু করেন প্রচারণা।
এজন্য মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মুহিবকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সম্রাট হোসেন। তিনি নিজে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে সমর্থকদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মুহিবুর রহমান। এরপর রাতে তাকে প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী, গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মো. জহির, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসাইন ও মুহিবুর রহমান।
আরও পড়ুন: সিলেটের সব আসনেই জয়ী হবে আওয়ামী লীগ: মোমেন
সিলেটে শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে লাখো মানুষের ঢল
১০ মাস আগে