ঢাকা-মস্কো
ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী : রাষ্ট্রদূত মানতিৎস্কি
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিৎস্কি বলেছেন, বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ তিনি বলেন, '২০২৪ সালটিও সমানভাবে আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে তারা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যময় করতে আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের সব পূর্বশর্ত এবং একই প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’
অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার রাশিয়ার।
২০২৩ সালের জানুয়ারি-নভেম্বরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়া রেলপথ, সড়ক নির্মাণ, ভবন, ধাতুবিদ্যা এবং অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে নিজেদের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কৃত্রিম ও বিপরীতমুখী প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মস্কো বাংলাদেশে প্রধান কৃষি-শিল্পজাত পণ্য, প্রধানত গম ও সার রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে।’
বাংলাদেশ ২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে ২৭ মিলিয়ন টন শস্য আমদানি করেছে।
রাষ্ট্রদূত মানতিৎস্কি বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভোজ্য তেল, মটরশুঁটি, ছোলা ও মসুর ডাল দিয়ে রপ্তানি পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতার মেরুদণ্ড হলো জ্বালানি। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে গ্যাজপ্রম।
ভোলা দ্বীপে আরও তিনটি কূপ খনন সম্পন্ন হওয়ায় মোট খননকৃত কূপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টিতে।
গ্যাস উত্তোলন এবং নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য কোম্পানির প্রস্তাবগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে।
মানতিৎস্কি বলেছেন, ‘প্রক্রিয়াধীন আরও প্রস্তাবনা এবং প্রকল্প রয়েছে, যেমন আরও স্থানীয় পরিশোধনের জন্য রাশিয়ান এলএনজি এবং অপরিশোধিত তেল সরবরাহ, রাশিয়ান সৌর শক্তি প্রযুক্তি, স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আপগ্রেড এবং আরও অনেক কিছু।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।
সাম্প্রতিক মাইলফলকগুলির মধ্যে, ইউনিট-২ এ প্যাসিভ তাপ অপসারণ সিস্টেমের ইনস্টলেশন রয়েছে।
প্রথম ইউনিটটি এই বছরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলক অপারেশন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার জেএসসি 'এএসই'র নিরাপত্তা সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়েছে। রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে উন্নত প্রকৌশল সমাধান এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।’
তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপিত একই ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর ইতোমধ্যে রাশিয়ায় চালু রয়েছে, যা তাদের দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।
ভূমিকম্প থেকে শুরু করে বিমান দুর্ঘটনা পর্যন্ত প্রায় সবকিছুতেই এরা বেঁচে থাকতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
পারমাণবিক জ্বালানি পরিবেশ বান্ধব, কোনও কার্বন নিঃসরণ করে না এবং দূষণ করে না।
এটি সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং পরিষ্কার। রাশিয়া পরমাণু প্রকল্পের পুরো জীবনচক্রে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সহায়তা করবে- যার মধ্যে রয়েছে চুল্লির জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ, প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য পরিচালনার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতা।
তিনি বলেন, রূপপুর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়েও বেশি কিছু। কয়েক ডজন বাংলাদেশি কোম্পানি নির্মাণ কাজের জন্য তাদের সেবা ও উপকরণ সরবরাহ করে।
তিনি বলেন, এনপিপি প্রকল্পটি স্থানীয়দের জন্য ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মক্ষেত্রের মাধ্যমে অর্থনীতির একটি নতুন খাত তৈরি করবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়ায় পরমাণু বিশ্ববিদ্যালয় এবং রূপপুরের শিক্ষা কেন্দ্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাশিয়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ দক্ষ প্রকৌশলী যুক্ত করতে সহায়তা করছে যা কেবল পারমাণবিক শিল্পেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অর্থবহ অবদান রাখতে সক্ষম।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের জানা গেছে যে, কিছু পশ্চিমাপন্থী মহল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কলঙ্কিত করার পরিকল্পনা করছে।
মানতিৎস্কি বলেন, অর্জনগুলোর দিকে মনোনিবেশৃ করার পরিবর্তে স্থানীয় সুযোগ-সন্ধানী সাংবাদিকরা স্বল্পস্থায়ী বিবেচনার জন্য আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতীককে ক্ষুণ্ন করতে প্রস্তুত।
তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের কোনো প্রকল্পে অনিবার্য ছোটখাটো ত্রুটিগুলোকে অতিরঞ্জিত করে এবং এর সুফলের দিকে চোখ বন্ধ করে রাখে।
ইউক্রেন ও ইউক্রেন পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি রাশিয়া-বাংলাদেশ বিষয়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, গত বছর পশ্চিমা দেশগুলোর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে। অন্য সবার মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের কায়েমী স্বার্থের উপর ভিত্তি করে যারা এখনও বিশ্বে তাদের ক্ষয়িষ্ণু আধিপত্যকে আঁকড়ে ধরে আছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পশ্চিমারা সৎ চুক্তি করতে উদ্বেগজনক অক্ষমতা প্রদর্শন করেছে এবং একটি অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় মঞ্চে রাশিয়া সার্বভৌম সমতা ও অবিভাজ্য নিরাপত্তার নীতির ভিত্তিতে সমস্ত রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ বিকাশের পক্ষে মত দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্মানজনক সংলাপ ও বাস্তবসম্মত সহযোগিতার সুযোগ বজায় রেখে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পরিকল্পনা কার্যকরভাবে ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
নভেম্বরে রুশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের একটি যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে শুভেচ্ছা সফর করে।
গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম রুশ নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশ করল।
১৯৭২-১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মাইন অপসারণ ও মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত দুজন প্রবীণ রুশ নাবিক ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।
৮ মাস আগে
ঢাকা-মস্কো সম্পর্কে আরও উন্নতির প্রত্যাশা রুশ রাষ্ট্রদূতের
নবনির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে ঢাকা ও মস্কোর সম্পর্কের আরও উন্নতি হবে এবং জনগণের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিৎস্কি।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক বার্তায় রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা সত্ত্বেও মস্কো ও ঢাকার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হচ্ছে।
২০২৩ সালে রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক বেশ কয়েকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে। যেমন সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের প্রথম বাংলাদেশ সফর; প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ এবং নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে রুশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের শুভেচ্ছা সফর।
আরও পড়ুন: রুশ রাষ্ট্রদূত আশা করছেন শিগগিরই ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হবে: তথ্যমন্ত্রী
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে রাশিয়া। বিভিন্ন কৃষি-শিল্পজাত পণ্য, বিশেষ করে গম ও সারের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারীও।’
রাষ্ট্রদূত মানতিৎস্কি বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রাশিয়ার শস্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ টন।
তিনি বলেন, 'আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থবহ মিথস্ক্রিয়া ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে কূটনৈতিক সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার আগে, কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে চলমান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাঙালি জনগণকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছিল।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, এরপর থেকে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের ইতিহাসে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও উল্লেখযোগ্য অর্জনের পাশাপাশি গৌরবময় স্মৃতি রয়েছে।
রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাশিয়ান ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে শক্তিশালী ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার এবং পারস্পরিক ভালোবাসা নতুন অর্জন এবং যৌথ স্বপ্নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।’
আরও পড়ুন: ঢাকা ও মস্কো লেনদেন-বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কাজ করছে: রুশ রাষ্ট্রদূত
৯ মাস আগে