পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি
বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদন বাকৃবি গবেষকের
বন্য খেজুর থেকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ভিনেগার উৎপাদনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার ও তার গবেষক দল।
বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার তৈরি বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন এ অধ্যাপক।
গবেষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদনে প্রক্রিয়াকরণের জন্য গাজন প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় কৃষি সম্পদ কাজে লাগিয়ে এবং অপচয় কমিয়ে এই পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও সহায়ক হতে পারে। গবেষণাটি বাংলাদেশের বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
উৎপাদিত ভিনেগারটির দেশের বাজারে প্রভাব সম্পর্কে অধ্যাপক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এই গবেষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভিনেগার উৎপাদন কেবল খাদ্য ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি প্যাকেজিং, কসমেটিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পেও ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিকর ভিনেগারের চাহিদা বাড়ছে যা বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।’
বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বাংলাদেশে বন্য খেজুর ইদানিং ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এটি বেশ সস্তা এবং স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য। এই খেজুর গাছ সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এবং রাস্তার পাশের জমিতে পাওয়া যায়। তবে নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ার পরেও এই বন্য খেজুর দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অব্যবহৃত একটি সম্পদ।’
গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বন্য খেজুরের রস ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া মাধ্যমে ভিনেগারে পরিণত করা হয়েছে। এ গবেষণায় একধরনের ইস্ট ব্যবহার করে ওই রসে অ্যালকোহল তৈরি করা হয় এবং পরে অ্যাসিটোব্যাক্টর প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়।’
গবেষক আরও জানান, গবেষণায় দেখা গেছে যে রসের ঘনত্ব যত বেশি হয় তত বেশি অ্যালকোহল এবং অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়। বেশি ঘনত্বের রসটি সবচেয়ে ভালো পুষ্টিগুণ, অ্যাসিডিটি ও ম্যাক্রো মিনারেলস (পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম) সমৃদ্ধ হয়। তাই এটি স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পণ্যও বটে।’
গবেষণাটি বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশনা এলসভিয়ার (Elsevier) এর নামকরা সাময়িকী ‘অ্যাপ্লাইড ফুড রিসার্চ’ এ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়।
ভিনেগার তৈরির এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও মাঠ পর্যায়ে সফলতা সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, ‘এই গবেষণা স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন আয় সৃষ্টির পথ খুলতে পারে। একদিকে খেজুর থেকে তৈরি ভিনেগারের উচ্চ মান এবং পুষ্টিগুণ সমপন্ন হওয়ায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের স্থানীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করবে।’
অধ্যাপক আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে বাকৃবি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আরও ছয় জন গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। বাকৃবি থেকে গবেষক দলে রয়েছেন- ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার এবং ওই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা ও আ ন ম ইফতেখার আলম। এছাড়া সিকৃবির খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফাহাদ জুবায়ের এবং ডুয়েটের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লোপা আনসারী গবেষক দলে যুক্ত ছিলেন।
২ সপ্তাহ আগে
পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে হবে: সাবের
ইট তৈরির গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ইটভাটা বন্ধ বা ভেঙে ফেলাই একমাত্র সমাধান নয়। ইট তৈরির বর্তমান গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির দিকে আমাদের যেতে হবে। আমরা ব্লক ইটের দিকে তাকিয়ে আছি।’
বুধবার জাতীয় সংসদে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: পরিবেশসংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর হেল্পলাইন ৩৩৩-৪ এর উদ্বোধন করলেন পরিবেশমন্ত্রী
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ কোটি মেট্রিক টন কৃষি মাটি ইটভাটায় ব্যবহৃত হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব রয়েছে, এজন্য আমরা ব্লক ইটের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছি।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০০ ইটভাটা চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেণ, ‘প্রতিটি ইটভাটায় বছরে গড়ে ৫০ লাখ ইট উৎপাদিত হয়, যা মোট পরিমাণ ২৫০ কোটি। বর্তমানে ব্লক ইট উৎপাদনের সক্ষমতা ৩০০ কোটি।’
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান ইটভাটাগুলো আমরা পরিকল্পিতভাবে বন্ধ করব। যাতে উন্নয়ন ব্যাহত না হয়, ইটের দাম যেন না বাড়ে।’
আগামী ১-২ বছরের মধ্যে ব্লক ইটের ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা চান তিনি।
আরও পড়ুন: জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য ম্যাপ তৈরি করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের আরও প্রবেশাধিকার চান পরিবেশমন্ত্রী
১০ মাস আগে