নৃশংস অপরাধ
নৃশংস অপরাধের জন্য মিয়ানমার থেকে আসা বিজিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান
বাংলাদেশে আসা মিয়ানমার বর্ডার গার্ড অব পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর করা অপরাধ ও নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে একত্রিত হয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে ফর্টিফাই রাইটস।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে শত শত বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশে সহায়তা ও সুরক্ষার পাশাপাশি অতীতে এই বিজিপি সদস্যরা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না- সেটি পর্যালোচনার ওপর জোর দিয়েছেন ফর্টিফাই রাইটসের সিইও ম্যাথু স্মিথ।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে মিয়ানমারের অন্যান্য সামরিক, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের উদ্বুদ্ধ করতে এটি সহায়তা করবে। এই সীমান্তরক্ষীদের কাছে এমন তথ্য থাকতে পারে যেসব মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধের জন্য অপরাধীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে সাহায্য করতে পারে। এ বিষয়ে তাদের ওপর সঠিকভাবে তদন্ত করা উচিত বলেও মনে করেন স্মিথ।
আরও পড়ুন: সেনা সদস্যসহ আরও ১২৩ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে: বিজিবি
বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মিয়ানমারের ২৬৪ জন বিজিপির সদস্য প্রবেশ করেছে; যাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন গুরুতর আহত, যারা এখন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাধীন।
কক্সবাজারে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের নিকটবর্তী জেলা বান্দরবানে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত হওয়া মিয়ানমারের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো অপরাধ তদন্তের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসি অফিস অব দ্য প্রসিকিউটরকে (ওটিপি) অনুমোদন দেয়। এ তদন্ত প্রায় চার বছর ধরে চলছে। আদালত এখনও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা অপরাধসংক্রান্ত কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি।
২০১০ সালে বাংলাদেশ আইসিসির একটি রাষ্ট্রীয় পক্ষ হয়ে মিয়ানমারের অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে আইসিসির সঙ্গে কাজ করেছিল।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিও উইন তুন এবং জাও নাইং তুন নামে মিয়ানমারের দুইজন সামরিক সদস্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এসে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় চেয়েছিল। তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। রোম সংবিধির একটি রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে ঢাকা আইসিসিকে এই দুই সাবেক সৈনিকের উপস্থিতি সম্পর্কে জানায়।
পরে এই দুই সৈন্যকে হেগে স্থানান্তরিত করা হয়। তারাই প্রথমবারের মতো মিয়ানমার থেকে আইসিসির হাতে আসা অপরাধী।
ফর্টিফাই রাইটস মনে করছে, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে বাংলাদেশেরও উচিত মিয়ানমারবিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বাধীন ব্যবস্থার (আইআইএমএম) সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা করা। মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১৯ সালে আইআইএমএম গঠন করে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালায়। শত শত গ্রাম ধ্বংস করে, হত্যা-ধর্ষণ আর নৃশংস অত্যাচার চালায়। প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
ফর্টিফাই রাইটস, মার্কিন সরকার, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন, রোহিঙ্গাদের সংঘঠনগুলোসহ অন্যান্যরা এই হামলাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৩ জনে: বিজিবি
১০ মাস আগে