পবিত্র শবে বরাতের শিক্ষা
পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য তাৎপর্যবহুল একটি দিবস শবে বরাত। বরাতের রাত বা ভাগ্যের রজনী হিসেবে পরিচিত এই দিনটি পালিত হয় আরবি বর্ষের শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এর পটভূমিতে রয়েছে মূলত দিবাগত রাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর মাহাত্ম্য যথেষ্ট প্রভাব রাখে ইসলামী জীবন ধারা চর্চায়। এ রাতে মহান আল্লাহ অতীতের পাপ-পঙ্কিলতা শুধরে নিয়ে আগামী দিনগুলো নতুন করে শুরু করার সুযোগ দেন। আর তাই এক নিষ্পাপ জীবনের প্রত্যাশায় বিগত কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। চলুন, মহিমান্বিত এই সময়ে পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
শবে বরাতের তাৎপর্য
এই রাতে নির্ধারিত হয়েছিল প্রতিটি মানুষের জীবনের শুরু ও শেষ দিনটি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্য বিধাতা আল্লাহ তায়ালা এই রাতে মানুষকে তার জীবনের যাবতীয় পাপ মোচনের সুযোগ দেন। এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জন্য নতুন করে জীবন রচনার এক অভাবনীয় দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তাই এই রাতকে ক্ষমা ও মুক্তির রাতও বলা হয়। পবিত্র কুরআনে ১৫ শাবানের রাতের কথা না থাকলেও নানা হাদীসগ্রন্থে এর বিভিন্ন ব্যাখা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: পবিত্র শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি
বায়হাকী হাদিস অনুসারে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) কে ১৫ শাবানের গুরুত্ব বোঝাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, কোন মানুষ কোন সময়ে জন্মগ্রহণ করবে এবং কোন সময়ে মারা যাবে তা এই রাতে নির্ধারণ হয়। তাই এই সময় মানুষের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ হয় এবং তাদের রিজিকের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে তাদের জন্য খোলা থাকে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের সমস্ত দরজা।
ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী হাদিসে আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) এর বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর বাণীতে উঠে আসে শবে বরাতের তাৎপর্য।
এখানে মুহাম্মদ (সাঃ) শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারা রাত জেগে নামায পড়তে আর দিনের বেলা রোযা রাখতে বলেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পর থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে ক্ষমা প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন। এ সময় তিনি যার রিযিক দরকার তাকে রিযিক দেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদমুক্ত করেন।
উমর ইবনে আবদুল আজিজসহ অন্যান্য ইসলামী পন্ডিতগণ বছরের চারটি রাতকে অবহেলা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা রাতগুলোতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন।
এগুলো হচ্ছে- রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫-তম রাত, ঈদুল ফিতরের আগের রাত এবং ঈদুল আজহার আগের রাতে।
আরও পড়ুন: কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
পবিত্র শবে বরাতের শিক্ষা
সত্যিকারের অনুতাপ
এই বিশেষ রাত পূর্বের ভুল-ভ্রান্তির জন্য সত্যিকার অর্থে অনুতপ্ত হতে শেখায়। এই অনুতাপ ভবিষ্যতে কোনো ভুল করার সময় এই রাত্রির কথা মনে করিয়ে দেবে। ফলে এক রকম দায়বদ্ধতার তৈরি হবে, যা জীবনকে পরিচালিত করতে পারে পূণ্যের পথে।
ক্ষমা করার মনোভাব
সমূহ পাপাচারের পরেও যে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহর তাকে ক্ষমা করেন। আর এই বিষয়টি প্রতিটি মানুষকে অন্তরের ঘৃণা দূর করে পরস্পরকে ক্ষমা করতে শেখায়। এই শিক্ষা প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও রাগের মত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষকে দূরে রাখে।
ইবাদত
ইসলামের বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসগুলোর মত শবে বরাতও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। ছোট জীবনে যত বেশি ইবাদত করা যায়, পাপ কাজ থেকে ততটাই দূরে থাকা যায়। শুধু তাই নয়, এভাবে সার্বক্ষণিক ইবাদতের মধ্যে থাকা একসাথে দুইটি ক্ষেত্রে সুফল দেয়। এক, এভাবে তওবার মধ্যে থাকলে আল্লাহ যদি চান অতীতের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেবেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি ইবাদতই আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা গেলে, এই দোয়াই হবে ভবিষ্যতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির উপায়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় দৃষ্টিনন্দন ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’
৮ মাস আগে