বেইলি রোড ট্র্যাজেডি
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: বৃষ্টির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া এক নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অবশেষে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে তার আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তিনি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে লেখালেখি করতেন।
রবিবার নিহতের ডিএনএর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে সংগৃহীত ডিএনএর নমুনা মিলে যাওয়ার ফলাফল এসেছে বলে জানান ঢাকা মেট্রো সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
ঘটনার ১১ দিন পর সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে নিহতের মরদেহ তার বাবা সবুজ শেখের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, নিহত নারী অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। সে কারণেই তার পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল এবং তার সহকর্মীরা তাকে হিন্দু বলে দাবি করেছিলেন। পরে তারা বুঝতে পেরে মরদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করতে থানায় চিঠি দেয়।
সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে নিহতের বাবা সবুজ শেখ বলেন, ‘আমি তার বাবা, আমি আল্লাহর কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবশেষে আজ মরদেহ হাতে পেয়েছি, গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাব। সেখানে তাকে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।’
সবুজ শেখের তিন মেয়ের মধ্যে বৃষ্টি খাতুন ছিলেন সবার বড়।
এ সময় রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে সবুজ শেখ মেয়ের মরদেহ নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন।
৮ মাস আগে
অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
আধুনিক নকশার আকাশচুম্বী অট্টালিকায় গতিশীল হচ্ছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু অন্যদিকে শিল্পের এই দ্রুত প্রসারই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জন-জীবনের জন্য। নির্মাণের ন্যূনতম মাপকাঠি মেনে না চলায় রীতিমতো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ভবনগুলো।একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার শহর ঢাকা। ভবন নির্মাণের সুস্পষ্ট বিধিমালা ও আইন থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে। এমতাবস্থায় জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোড-এর বাস্তবায়ন কেন অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় বিল্ডিং কোড
অবকাঠামো নির্মাণকল্পে পূর্ব নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট নীতি সম্বলিত নথির নাম বিল্ডিং কোড, যার উপর নির্ভর করে স্থাপনা তৈরির মানদণ্ড। সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এই নীতিমালা। সাধারণত স্থানীয় কাউন্সিলের কাছ থেকে পরিকল্পনার অনুমতি পাওয়ার জন্য ভবনগুলোকে এই কোড মেনে চলতে হয়। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হল জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিল্ডিং কোড বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- আন্তর্জাতিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় কোড। স্থানভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটি কোডেরই উদ্দেশ্য এক।
বাংলাদেশের নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সর্বতভাবে বিএনবিসি (বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড) অনুসরণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে হালনাগাদকৃত কোডটি এখনও বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ হচ্ছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় বিল্ডিং কোডের অগ্নি সুরক্ষা সম্পর্কিত বিধান
অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিরসনে পূর্ব সতর্কতা এবং জরুরী অবস্থায় করণীয় সমূহ নিয়ে অগ্নি সুরক্ষার জন্য বিএনবিসি’র সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
- আগুনের বিস্তার প্রতিরোধের জন্য অগ্নি-প্রতিরোধী উপকরণ নিয়ে প্রতিটি ভবন নির্মাণ করতে হবে।
- ভবনগুলো আগুন সনাক্তকরণ এবং অ্যালার্ম সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। আগুনের ধোঁয়া, তাপ ও আগুন শনাক্ত করতে এবং আগুনের ব্যাপারে বাসিন্দাদেরকে দ্রুত সতর্ক করতে এগুলো কার্যকর হতে হবে।
- অগ্নি-দুর্ঘটনার সময় দ্রুত বাইরে বের হওয়ার জন্য ভবনগুলোতে একাধিক উপায় থাকতে হবে। যেমন- সিঁড়ি, করিডোর এবং এক্সিট অগ্নিকাণ্ডের সময় বাসিন্দাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করে।
- আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নেভানোর জন্য সহায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনকে সজ্জিত করতে হবে।
- আগুন লাগার সময় ধোঁয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভবনে ধোঁয়া পরিচালন ব্যবস্থা যেমন স্মোক ভেন্ট, এক্সস্ট ফ্যান এবং প্রেসারাইজেশন সিস্টেম থাকতে হবে।
- অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ভবনের মালিক এবং বাসিন্দাদের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
জাতীয় ফায়ার কোড
অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি সুরক্ষায় জরুরি নির্দেশনামুলক এবং দক্ষতা-সম্পর্কিত বিধিমালার নাম ফায়ার কোড।
বাংলাদেশের বর্তমান অনুসৃত ফায়ার কোড হচ্ছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪, যেটি নির্ধারিত হয়েছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩-এর আওতায়।
এই আইন অনুযায়ী একটি বহুতল বাণিজ্যিক কাঠামোগত নকশা বা বিন্যাসের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়। বিল্ডিং নিরাপত্তা যাচাই করে একটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে এই সম্মতি প্রদান করা হয়। এই ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা
- নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নি-নিরাপত্তা পরিকল্পনা
- ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ
- কাছাকাছি পানির সংস্থান
- গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না
অতঃপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। নির্মাণকাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য পুনরায় রাজউকের সরণাপন্ন হতে হয়। এ সময় রাজউক অনুমিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা তদারক করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই প্রদান করা হয় বসবাস বা ব্যবহারের সনদ।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনটিতে ‘ফায়ার এক্সিট’ নেই: প্রধানমন্ত্রী
৮ মাস আগে
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভোলার ২ যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যান ও অপরজন কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে কর্মস্থলে যোগ দেন। দুই পরিবারে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমদাদুল হক জোনায়েদ আাহমদ (২৪) বৃহস্পতিবার মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু নিয়ে ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। অগ্নিকাণ্ডে বের হতে না পেরে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকালে তার মৃতদেহ ভোলায় আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তার স্বজনরা জানান, ভোলার বিএভিএস সড়কের অবসরপ্রাপ্ত ভূমি অফিসের জেলা কর্মকর্তা মাইনুল হক হারুনের একমাত্র ছেলে। মা-বাবা ও দুই বোনসহ তারা ঢাকায় বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হন। পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু মিলে বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর বন্ধুরা গল্প করছিলেন। এর মধ্যে সিয়াম টয়লেটে যান। টয়লেটে গিয়ে ধোঁয়া দেখে তিনি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে আসেন এবং ফোনে বন্ধুদের দ্রুত নামতে বলেন।
বন্ধুরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে সেখানে বিস্ফোরণে আগুন চলে আসলে তারা ৩ বন্ধু আটকা পড়ে আর বের হতে পারেননি।
এ অবস্থায় শেষবারের মতো তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে রাত ১০টার দিকে কথা হয়। জোনায়েদ বলেন, ‘মা আমি বেইলি রোডে আছি। আমি আসতেছি।’
এটাই ছিল তারা শেষ কথা। এরপর তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জোনায়েদের মৃত্যু হয়। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আংটি দেখে জোনায়েদকে শনাক্ত করা হয়।
এদিকে ভোলায় খলিফাপট্টি জামে মসজিদে জানাজা শেষে তাকে কালিবাড়ি রোড বিল্লা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সন্ধ্যার দিকে দাফন করা হয়।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের চাকরিতে যোগ দেন ভোলা সদর উপজেলা চর কুমারিয়া গ্রামের মো. সিরাজের ছেলে মো. নয়ন।
দরিদ্র কৃষক বাবাকে অর্থের যোগান দিতে কাচ্চি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। আর তার জীবিত ফেরা হয়নি বাড়িতে। অগ্নিকাণ্ডে আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শুক্রবার সারাদিন প্রলাপ করেছেন মা। আর নির্বাক বাবা অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান নাজমা ও তার পরিবার। সেই থেকেই চলছে তার বিলাপ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ১৯ বছর বয়সী নয়ন ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় যান। বাবুর্চির সহকারী হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যোগদান করেন। ওইরাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় তার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।
এদিকে নিহতের ভাই দুপুরে ঢাকা মেকিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ চিহ্নিত করেন। নয়নের বাবা-মায়ের দাবি কর্মস্থলে এমনভাবে আর কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয়। সিরাজ-নাজমা দম্পত্তির ৬ সন্তানের মধ্যে নয়ন সবার ছোট।
নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নয়নের বাবা মো. সিরাজ। ছেলের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যর খবর কোনোভাবেই মানতে পারছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই নির্বাক বসে আছেন। ছেলের লাশের অপেক্ষায় গ্রহর গুনছিলেন। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জন আটক
৮ মাস আগে