শোকের ছায়া
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভোলার ২ যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যান ও অপরজন কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে কর্মস্থলে যোগ দেন। দুই পরিবারে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমদাদুল হক জোনায়েদ আাহমদ (২৪) বৃহস্পতিবার মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু নিয়ে ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। অগ্নিকাণ্ডে বের হতে না পেরে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকালে তার মৃতদেহ ভোলায় আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তার স্বজনরা জানান, ভোলার বিএভিএস সড়কের অবসরপ্রাপ্ত ভূমি অফিসের জেলা কর্মকর্তা মাইনুল হক হারুনের একমাত্র ছেলে। মা-বাবা ও দুই বোনসহ তারা ঢাকায় বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হন। পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু মিলে বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর বন্ধুরা গল্প করছিলেন। এর মধ্যে সিয়াম টয়লেটে যান। টয়লেটে গিয়ে ধোঁয়া দেখে তিনি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে আসেন এবং ফোনে বন্ধুদের দ্রুত নামতে বলেন।
বন্ধুরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে সেখানে বিস্ফোরণে আগুন চলে আসলে তারা ৩ বন্ধু আটকা পড়ে আর বের হতে পারেননি।
এ অবস্থায় শেষবারের মতো তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে রাত ১০টার দিকে কথা হয়। জোনায়েদ বলেন, ‘মা আমি বেইলি রোডে আছি। আমি আসতেছি।’
এটাই ছিল তারা শেষ কথা। এরপর তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জোনায়েদের মৃত্যু হয়। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আংটি দেখে জোনায়েদকে শনাক্ত করা হয়।
এদিকে ভোলায় খলিফাপট্টি জামে মসজিদে জানাজা শেষে তাকে কালিবাড়ি রোড বিল্লা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সন্ধ্যার দিকে দাফন করা হয়।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের চাকরিতে যোগ দেন ভোলা সদর উপজেলা চর কুমারিয়া গ্রামের মো. সিরাজের ছেলে মো. নয়ন।
দরিদ্র কৃষক বাবাকে অর্থের যোগান দিতে কাচ্চি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। আর তার জীবিত ফেরা হয়নি বাড়িতে। অগ্নিকাণ্ডে আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শুক্রবার সারাদিন প্রলাপ করেছেন মা। আর নির্বাক বাবা অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান নাজমা ও তার পরিবার। সেই থেকেই চলছে তার বিলাপ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ১৯ বছর বয়সী নয়ন ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় যান। বাবুর্চির সহকারী হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যোগদান করেন। ওইরাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় তার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।
এদিকে নিহতের ভাই দুপুরে ঢাকা মেকিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ চিহ্নিত করেন। নয়নের বাবা-মায়ের দাবি কর্মস্থলে এমনভাবে আর কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয়। সিরাজ-নাজমা দম্পত্তির ৬ সন্তানের মধ্যে নয়ন সবার ছোট।
নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নয়নের বাবা মো. সিরাজ। ছেলের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যর খবর কোনোভাবেই মানতে পারছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই নির্বাক বসে আছেন। ছেলের লাশের অপেক্ষায় গ্রহর গুনছিলেন। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জন আটক
৮ মাস আগে