অগ্নি সুরক্ষা
অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
আধুনিক নকশার আকাশচুম্বী অট্টালিকায় গতিশীল হচ্ছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু অন্যদিকে শিল্পের এই দ্রুত প্রসারই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জন-জীবনের জন্য। নির্মাণের ন্যূনতম মাপকাঠি মেনে না চলায় রীতিমতো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ভবনগুলো।একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার শহর ঢাকা। ভবন নির্মাণের সুস্পষ্ট বিধিমালা ও আইন থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে। এমতাবস্থায় জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোড-এর বাস্তবায়ন কেন অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় বিল্ডিং কোড
অবকাঠামো নির্মাণকল্পে পূর্ব নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট নীতি সম্বলিত নথির নাম বিল্ডিং কোড, যার উপর নির্ভর করে স্থাপনা তৈরির মানদণ্ড। সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এই নীতিমালা। সাধারণত স্থানীয় কাউন্সিলের কাছ থেকে পরিকল্পনার অনুমতি পাওয়ার জন্য ভবনগুলোকে এই কোড মেনে চলতে হয়। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হল জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিল্ডিং কোড বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- আন্তর্জাতিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় কোড। স্থানভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটি কোডেরই উদ্দেশ্য এক।
বাংলাদেশের নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সর্বতভাবে বিএনবিসি (বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড) অনুসরণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে হালনাগাদকৃত কোডটি এখনও বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ হচ্ছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় বিল্ডিং কোডের অগ্নি সুরক্ষা সম্পর্কিত বিধান
অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিরসনে পূর্ব সতর্কতা এবং জরুরী অবস্থায় করণীয় সমূহ নিয়ে অগ্নি সুরক্ষার জন্য বিএনবিসি’র সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
- আগুনের বিস্তার প্রতিরোধের জন্য অগ্নি-প্রতিরোধী উপকরণ নিয়ে প্রতিটি ভবন নির্মাণ করতে হবে।
- ভবনগুলো আগুন সনাক্তকরণ এবং অ্যালার্ম সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। আগুনের ধোঁয়া, তাপ ও আগুন শনাক্ত করতে এবং আগুনের ব্যাপারে বাসিন্দাদেরকে দ্রুত সতর্ক করতে এগুলো কার্যকর হতে হবে।
- অগ্নি-দুর্ঘটনার সময় দ্রুত বাইরে বের হওয়ার জন্য ভবনগুলোতে একাধিক উপায় থাকতে হবে। যেমন- সিঁড়ি, করিডোর এবং এক্সিট অগ্নিকাণ্ডের সময় বাসিন্দাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করে।
- আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নেভানোর জন্য সহায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনকে সজ্জিত করতে হবে।
- আগুন লাগার সময় ধোঁয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভবনে ধোঁয়া পরিচালন ব্যবস্থা যেমন স্মোক ভেন্ট, এক্সস্ট ফ্যান এবং প্রেসারাইজেশন সিস্টেম থাকতে হবে।
- অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ভবনের মালিক এবং বাসিন্দাদের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
জাতীয় ফায়ার কোড
অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি সুরক্ষায় জরুরি নির্দেশনামুলক এবং দক্ষতা-সম্পর্কিত বিধিমালার নাম ফায়ার কোড।
বাংলাদেশের বর্তমান অনুসৃত ফায়ার কোড হচ্ছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪, যেটি নির্ধারিত হয়েছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩-এর আওতায়।
এই আইন অনুযায়ী একটি বহুতল বাণিজ্যিক কাঠামোগত নকশা বা বিন্যাসের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়। বিল্ডিং নিরাপত্তা যাচাই করে একটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে এই সম্মতি প্রদান করা হয়। এই ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা
- নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নি-নিরাপত্তা পরিকল্পনা
- ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ
- কাছাকাছি পানির সংস্থান
- গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না
অতঃপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। নির্মাণকাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য পুনরায় রাজউকের সরণাপন্ন হতে হয়। এ সময় রাজউক অনুমিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা তদারক করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই প্রদান করা হয় বসবাস বা ব্যবহারের সনদ।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনটিতে ‘ফায়ার এক্সিট’ নেই: প্রধানমন্ত্রী
৮ মাস আগে