সফল জননী
‘সফল জননী’ হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেলেন চা শ্রমিক কমলি রবিদাস
নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পাঁচজন নারীকে জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয়েছে শুক্রবার (৮ মার্চ)। এবার সেই জাতীয় পর্যায়ে ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কানিহাটি চা বাগানের চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘আলোচনা সভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ১ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ গ্রহণ করেন চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস।
এর আগে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মাননা পেয়েছেন। এবার জাতীয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেলেন।
সম্মাননা গ্রহণ করে ভীষণ আনন্দিত কমলি রবিদাস বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। হামার খুব আনন্দ লাগছে। এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী হাত থেকে পুরস্কার পাওয়ায় এখন হামার কষ্ট দূর হয়েছে।’
এদিকে সংগ্রামী মায়ের উদ্যমী ছেলে সন্তোষ রবিদাস বলেন, ‘মায়ের এমন অর্জনে আমি ভীষণ আনন্দিত। মা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পুরস্কৃত করলেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?’
কমলগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর শমশেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবিদাসের। জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার মা কমলি রবিদাস তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা। ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ রবিদাস।
মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে ২০২২ সালে ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ এমন শিরোনামে একটি ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন সন্তোষ। সেই সূত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষ রবিদাসকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল।
এবার কিন্তু মায়ের নামটা কাটা পড়েনি। মা চা-শ্রমিক কমলি রবিদাস 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
রবিদাসের সেই দুর্দিন ফুরিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকের এই পর্যায়ে আসার মূল কৃতিত্বের দাবিদার আমার মা। এ ছাড়া আরও আছেন আমার শিক্ষক, সহপাঠী, ভাইবোন ও শুভকাঙ্ক্ষীরা।
সন্তোষ রবিদাস এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিলেট নগরীর লালদীঘিরপার শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, কানিহাটি চা বাগানের কমলি রবিদাস একজন সংগ্রামী নারী। তার এই পুরস্কারে উপজেলাবাসী গর্ববোধ করছে।
৮ মাস আগে