রোজায় শারীরিক সুস্থতা
রোজায় শরীর সুস্থ রাখতে যে ১০টি বিষয় এড়িয়ে চলা উচিৎ
শুধু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রশিক্ষণ দিতে নয়, রমজানের আগমন ঘটে একটি সুস্থ জীবন পরিচালনার বার্তা নিয়ে। এক মাসের এই কর্মপদ্ধতিতে থাকে সারা বছরের রোগমুক্তির পাথেয়। এরপরেও পুরনো অভ্যাস ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকেই বঞ্চিত হন রোজা রাখার পূর্ণ উপযোগিতা থেকে। দৈনন্দিন জীবনের বেশ কিছু অস্বাস্থ্যকর কার্যকলাপে বছরের সাধারণ দিনগুলোতেই দেহ অরক্ষিত হয়ে থাকে। সেখানে টানা এক মাস দিনের একটা বিরাট সময় অনাহারে থাকা আরও কঠিন। আর এখানেই রোজা পালনে শারীরিক যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। তাই চলুন, রোজা রাখার সময় শারীরিক সুস্থতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ১০টি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
রমজান মাসে সুস্থভাবে রোজা রাখতে যে ১০টি বিষয়ে সচেতনতা জরুরি
.
সেহরি বা ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া
সারাদিন অনাহারে থাকার পর সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার মুহুর্তে স্বভাবতই পেট পূর্তির প্রতি একটু বেশিই আকুলতা কাজ করে। এই সহজাত প্রবৃত্তির তাড়ণায় সাড়া দিয়ে অনেকেই ইফতারে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এরকম অনিয়ন্ত্রিত আহার বদহজম এবং ওজন বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেয়।
এ সময় অনেকের মধ্যে এক বসাতেই সব খাবার গোগ্রাসে গেলার প্রবণতা দেখা যায়, যা আরও বেশি ক্ষতিকর। এর ফলে খাবার হজমে দেরি হয় এবং বিপাক ক্রিয়ার কার্যক্ষমতা কমে যায়।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
এর বদলে পানি দিয়ে রোজা ভেঙে মাগরিব নামাজ পড়ে তারপর আবার খেতে বসা উত্তম। এতে করে পরিপাক তন্ত্রের খাবার হজমকারী এনজাইমগুলো প্রস্তুত হওয়ার সময় পায়।
পেট পূর্তির এই সমস্যাটি সেহরির ক্ষেত্রেও দেখা যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন যে রোজা শুরুর ঠিক আগ মুহুর্তে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে পরবর্তীতে দিনের বেলায় আর তৃষ্ণা লাগবে না। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ এর ফলে পানি থেকে মুক্তি পেতে কিডনি দ্রুত সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে প্রস্রাব হয়ে যাওয়াতে এই অতিরিক্ত পানি পান কোনও কাজেই লাগে না। বরং দিনের বেলায় তৃষ্ণা লাগার ব্যাপারটি অব্যাহত থাকে।
ইফতারে তৈলাক্ত, অধিক চিনি ও লবণযুক্ত খাবার খাওয়া
সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে সেই মাত্রাতিরিক্ত খাবারের অধিকাংশই থাকে ভাজা-পোড়া কিংবা অধিক চিনি বা লবণযুক্ত। এছাড়া এগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণও থাকে বেশি। সারাদিন উপবাসের পর এই খাবারগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই এক ভালো লাগা অনুভূতি দেয়। কিন্তু অন্যদিকে পরের দিনের রোজা পালনটা কঠিন হয়ে ওঠে।
মশলাদার এবং অধিক লবণযুক্ত খাবার শরীরের পানির চাহিদা বৃদ্ধি করে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে অলসতা ও ক্লান্তির উদ্রেক ঘটে। নিয়মিত এ ধরনের খাদ্য গ্রহণে রক্তে শর্করার মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
সেহরির বিষয়ে উদাসীনতা
বেশি রাত করে ঘুমাতে যেয়ে অনেকেরই সেহরির সময়টা বাদ পড়ে যায়। কেউ কেউ অগত্যা সেহরি ছাড়াই পরের দিনের রোজা অব্যাহত রাখেন। অনেকে আবার এই ঝামেলা এড়াতে ভোর রাতের বদলে রাত ১ টার মধ্যে সেহরি করে শুয়ে পড়েন। এই কার্যকলাপ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালনের জন্য শরীর যথেষ্ট পুষ্টি এবং শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
দিনের বেলা বিরামহীন পানিশূন্যতার মধ্য দিয়ে ক্লান্তি বোধ হয়। তদুপরি, সেহরি ও ইফতারে সল্পাহারের পরিবর্তে শুধু ইফতারে দুই বেলার খাবার একসঙ্গে খেলে গ্যাস্ট্রিক ও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
ক্যাফেইন গ্রহণ
কফি এবং চা-এ থাকা উত্তেজক পদার্থ ক্যাফেইনের মধ্যে রয়েছে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে কফি বা চা পান মানেই প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আর এভাবে ঘন ঘন প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর পানিশূন্যতার দিকে এগিয়ে যায়। তাই রমজানের আগে থেকে কফি বা চা পানের অভ্যাসটি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
৭ মাস আগে