যৌক্তিক
সরকারের সঙ্গে পেনশন বিরোধে শিক্ষকদের পাশে বিএনপি, আন্দোলনকে 'যৌক্তিক' বললেন রিজভী
নতুন সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা 'প্রত্যয়' বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যায়িত করে এ ধরনের গণবিরোধী নীতি গ্রহণের জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমরা মনে করি এটি একটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন। 'প্রত্যয়' প্রকল্পের বিধান অনুসারে, শিক্ষকরা তাদের নিজের বেতন থেকে তাদের পেনশন তহবিল করবেন এবং সরকার অর্ধেক... এটা এক ধরনের তামাশা।’
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষক ও শিক্ষাখাতের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত বৈরী মনোভাব পোষণ করছে, যা শিক্ষার মানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যয় পেনশন প্রকল্পের আড়ালে শিক্ষকরা যে ন্যায্য পেনশনের টাকা পেতেন, তা কেটে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের প্রতিকূলতা ও অনাহারের দিকে ঠেলে দিতেই এটি একটি পদক্ষেপ মাত্র।’
বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিদের পাচার ও লুটপাটের অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ না নিয়ে শিক্ষকদের পেনশনের অর্থ সংকোচনের জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী।আরও পড়ুন: নাটোরে বিএনপির সমাবেশে হামলায় কেন্দ্রীয় নেতাসহ আহত ৭
তিনি যুক্তি দেন, এই লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করে সরকার শিক্ষকদের পূর্ণ পেনশন নিশ্চিত করতে পারে। পুরো পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো না।
ব্যাপক দুর্নীতি ও ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার মতো ভুল নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য করার জন্যও সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, আপনারা এখন লুটপাটের মাধ্যমে কোষাগার শূন্য করে শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা খর্ব করছেন। এটা সম্পূর্ণ গণবিরোধী নীতি।
এর আগে সোমবার 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিমের প্রতিবাদে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করলে তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সরকার প্রবর্তিত এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
রিজভী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের 'ক্যাডাররা' সাধারণ মানুষ, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে সারাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালনকালে পাবনা, নাটোর, রাজশাহী ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী হামলার শিকার হন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবস্থান ‘জাতীয় তামাশা’: রিজভী
৫ মাস আগে
সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্ডে ব্যয়করকে যৌক্তিক করতে চায় সরকার
রাজস্ব আদায়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে এবং পূর্ববর্তী অর্থবছরের আদায় না হওয়া রাজস্ব (Foregone revenue) বা পরোক্ষ সরকারি ব্যয়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার ব্যয়করকে যৌক্তিকীকরণে কাজ করছে বলে সরকারি এক নথিতে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬) অনুযায়ী, আন্তঃসংস্থা সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যাপ্ত ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করাকে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করছে সরকার।
চলতি সপ্তাহে ইউএনবির হাতে কিছু নথিপত্র এসেছে। এতে দেখা গেছে, ‘ব্যয়কর বিশ্লেষণ শুরু করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে আয়কর ও ভ্যাটের জন্য করের হারের মানদণ্ড নির্ধারণ এবং ভিত্তি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা।’
ভ্যাট, আয়কর ও কাস্টমসে প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ও পছন্দের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করাও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে: কৃষিমন্ত্রী
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকায়, কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় বা লোকসান হয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না- তা সরকারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
সরকার সামাজিক বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ, নির্দিষ্ট খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন কর সুবিধার অনুমতি দেয়।
এতে বলা হয়, ‘পূর্ববর্তী অর্থবছরের আদায় না হওয়া রাজস্ব অনুমান করার জন্য একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে তা হলো ব্যয়কর মূল্যায়ন।’
ব্যয়কর হলো একটি বেঞ্চমার্ক (বা রেফারেন্স) কর ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অগ্রাধিকারমূলক ট্যাক্স ট্রিটমেন্টের কারণে সংগ্রহ না করা অনুমিত রাজস্ব, যা নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও সমতার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
ব্যয়করের মধ্যে কর ছাড়, হ্রাসকৃত করের হার, ট্যাক্স ক্রেডিট, ট্যাক্স হলিডে, ট্যাক্স ভাতা, ট্যাক্স বিলম্ব ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ব্যয়কর প্রাক্কলন বিভিন্ন বিশেষ কর ব্যবস্থার ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণ করে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর এবং কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর সম্ভাব্য উপায়গুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।
অনেক দেশ ব্যয়কর মূল্যায়নকে তাদের বার্ষিক বাজেট অনুশীলনের অংশ করে নিয়েছে।
যদিও বাংলাদেশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যয়করের প্রাক্কলন শুরু করতে পারেনি, ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট আয়করের জন্য একটি ব্যয়কর বিশ্লেষণ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
ছোট আকারে হলেও এবং পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, সেই বিশ্লেষণের ফলাফল বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রায় ৩৬ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার পূর্ববর্তী অর্থবছরের অপরিশোধিত কর।
যদি কেউ জমি হস্তান্তরে ব্যয়কর যোগ করে তাহলে জিডিপি হিসাবের আওতাভুক্ত নয় এমন মূলধনী লাভের একটি বড় অংশ পূর্ববর্তী অর্থবছরের অপরিশোধিত করে পরিণত হয়। আরও প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।
এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ২.৬ শতাংশ।
যদিও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বৃহত্তর প্রবেশাধিকার, বৈষম্য হ্রাসের মতো কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ব্যয়কর মঞ্জুর করা হয়। এর মূল্যায়নগুলো অর্জিত সুবিধা ও রাজস্ব ক্ষতির মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে।
মূসকের ক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবরণীতে (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬) বলা হয়েছে, কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের মতো বেশ কিছু খাত (মোট জিডিপির ২১ দশমিক ২ শতাংশ) মূল্য সংযোজন করের আওতা বহির্ভূত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রকৌশল (হালকা), গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য, ওষুধ, কম্পিউটার দ্রব্য ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি, রপ্তানিমুখী শিল্প ইত্যাদি শিল্পকে স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যা জিডিপির আরও ২৩ শতাংশ।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে (জিডিপির ১৫ শতাংশ) একটি বড় অংশ ভ্যাটমুক্ত। পরিবহন ব্যয় সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী করতে পরিবহন সেবার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (জিডিপির ৭.৫ শতাংশ) ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্যাটের বাইরে রাখা হয়েছে।
গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব সম্মেলনে এক উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশে পণ্য ও সেবার ওপর কোনো ভ্যাট আদায় করা হয় না।
যদিও ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের অবদান কমে যেতে পারে, তবুও বর্তমানে এটি সরকারি কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির বিষয় ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সব আমদানির ১৫ শতাংশ শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্ডেড কারখানা, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানা এবং ১৯.৮ শতাংশ আমদানি সম্পন্ন করেছে এসআরও/অর্ডারের আওতায় বিশেষ কর সুবিধা থেকে।
সব মিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট আমদানির ৪২ দশমিক ৩ শতাংশে কোনো শুল্ক আদায় হয়নি।
আরও পড়ুন: জিম্মি নাবিকদের সুস্থ ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর: নৌপ্রতিমন্ত্রী
চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সরকার শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: আইনমন্ত্রী
৯ মাস আগে