ইবাদত-বন্দেগী
পবিত্র শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয়
পবিত্র রমজান মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সময়টি হচ্ছে শবে কদর। ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মহিমান্বিত রাতটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ইসলামী জীবন ব্যবস্থায়। প্রতি বছর এই সময়টিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগীতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন। রমজানের ঠিক কততম দিনে এই রাতের আগমন ঘটে সে ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট করা তারিখ নেই। তবে হাদীস অনুসারে মাসের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। চলুন, তাৎপর্যপূর্ণ এই সৌভাগ্যের রাতের বিশেষত্ব বিশ্লেষণের পাশাপাশি জেনে নিই- কীভাবে এর সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করা যায়।
শবে কদর কী
আরবী ভাষায় ‘কদর’ বলতে ভাগ্যের পরিমাপ বা পরিধি বোঝানো হয়। আর শব শব্দটি ফার্সি ভাষার, যার অর্থ রাত। এছাড়া এই রাতের অন্যান্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ (সৌভাগ্যের রাত), ‘লাইলাতুল আযমা’ (মহত্বের রাত) এবং ‘লাইলাত আল-শরাফ’ (সম্মানের রাত)।
শবে কদরের সময়টি বিস্তৃত সূর্যাস্ত বা মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত। তবে রাতটি আসলে ঠিক কোন তারিখের তা সুনির্দিষ্ট নয়। তবে বুখারি ও মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ অনুযায়ী এটি রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোর যে কোনও একটি। অর্থাৎ সুস্পষ্টভাবে রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তম রাতগুলোর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দশটি প্রাচীন মসজিদ: দেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন
শবে কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
৬১০ হিজরী সনের এই রাতে নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম ৫ আয়াত। মক্কার জাবালে নূর পর্বতের হেরা গুহায় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসেছিলেন আল্লাহর বাণী নিয়ে। এটি ছিল আল কুরআনের ৯৬-তম সূরা আল আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত। এরপর থেকে টানা ২৩ বছরে পুরো কুরআন নাজিল সম্পন্ন হয়।
এই মূল্যবান রাতটিকে উদ্দেশ্য করে কুরআন মাজিদের সম্পূর্ণ একটি সূরাই রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ সময় সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ফেরেশতারা পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং ভোর না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বর্ষণ করতে থাকেন।
অর্থাৎ এই এক রাতের একটি মাত্র নেক আমল হাজার মাসের বরকত নিয়ে আসে। সারা জীবন ইবাদত করেও এ রাতের ইবাদতের মাধ্যমে যে বরকত পাওয়া যায় তার সমান হবে না। একই সঙ্গে এটি আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার রাত। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য এবং আশীর্বাদ লাভের পরম সুযোগ। যারা এই সময় ঈমানের সঙ্গে নামাজ পড়বে, তাদের পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়
মুহাম্মদ (সা.) এই সম্মানের রাতটির জন্য অপেক্ষা করতেন। রমজানের শেষ দশ দিন শুরু হতেই তিনি ইতিকাফে বসে যেতেন এবং সারা রাত ধরে নামায পড়তেন। নিজের অনুসারীদেরকেও তিনি এভাবে সৌভাগ্যের রাতকে সম্মানিত করতে অনুপ্রাণিত করতেন।
৮ মাস আগে