নির্বাচনি জনসভা
নির্বাচনি জনসভায় 'অনুপ্রবেশকারী' বলায় মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ মোদির বিরুদ্ধে
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল (ইউএনবি)-‘অনুপ্রবেশকারী’ বলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল। দেশটিতে সপ্তাহব্যাপী সাধারণ নির্বাচন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর একটি নির্বাচনি সমাবেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন তিনি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানে রবিবারের সমাবেশে মোদি বলেন, কংগ্রেস পার্টি যখন সরকারে ছিল, তখন তারা বলেছিল, দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের অগ্রাধিকার রয়েছে। যদি তারা ক্ষমতায় ফিরে আসে তবে দলটি ‘আপনার সমস্ত সম্পদ একত্রিত করবে এবং যাদের আরও সন্তান রয়েছে তাদের মধ্যে বিতরণ করবে।’ মোদির এ কথার শোনার পর জনতা হাততালি উল্লাস প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, ‘তারা অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে এটি বিতরণ করবে। আপনি কি মনে করেন আপনার কষ্টার্জিত অর্থ অনুপ্রবেশকারীদের দেওয়া উচিত?’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির ফোনালাপ: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকবে
কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘অত্যন্ত অত্যন্ত আপত্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। দলটি সোমবার ভারতের নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকা কমিশনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলে।
মোদির এই মন্তব্যে মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানো এবং নির্বাচনি বিধি ভঙ্গের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও প্রার্থীদের ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে এমন কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান নিষিদ্ধ।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি অনুসারে ভোটারদের সুরক্ষিত রাখতে ‘জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক অনুভূতিতে আঘাত করা’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মুসলিম আইনপ্রণেতা ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন পার্টির সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইদি রবিবার বলেন, 'মোদি আজ মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী বলার পাশাপাশি বলেছেন, মুসলিমদের অনেক সন্তান থাকে। ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদীর একমাত্র অঙ্গীকার হলো মুসলিমদের হেনস্থা করা ও এভাবেই ভোট আদায় করা।
কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদির সমালোচকরা বলছেন, ২০১৪ সালে মোদির দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এবং ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের বৈচিত্র্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, মোদির বিজেপি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা লালন করে এবং কখনো কখনো সহিংস হয়ে উঠছে। তবে মোদির দলটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের নীতির কারণে সমস্ত ভারতীয়রা উপকৃত হয়।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মোদির আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আরও নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে। হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত গরুর মাংস খাওয়া বা গরু পাচারের অভিযোগে উগ্রহিন্দুরা অসংখ্য মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জন করা হয়েছে, তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং উপাসনালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের গণহত্যার জন্য কিছু প্রকাশ্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মোদির শোক
২০০৬ সালে কংগ্রেসের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি বিবৃতির ভিত্তিতে মোদি এই মন্তব্য করেছিলেন। সিং বলেন, ভারতের নিম্নবর্ণ, উপজাতি, নারী ও ‘বিশেষত মুসলিম সংখ্যালঘুদের’ সমানভাবে দেশের উন্নয়নে অংশ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
সিং বলেন, ‘সম্পদের ওপর তাদের প্রথম দাবি থাকতে হবে।’ একদিন পরেই তার দপ্তর থেকে বিষয় স্পষ্ট করে জানানো হয়, মনমোহন সব পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর কথা বলছেন।
বেশিরভাগ জরিপে দেখা গেছে, মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত ফলাফল বের হবে ৪ জুন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদীর মন্তব্যকে 'বিদ্বেষমূলক ভাষণ' বলে বর্ণনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ খাড়গে লেখেন, ‘ভারতের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী তার পদের মর্যাদার এতটা নীচে নামিয়ে আনেননি যতটা মোদী করেছেন।’
নির্বাচন কমিশনের কাছে করা আবেদনে দলটি বলেছে, মোদী ও বিজেপি নির্বাচনি প্রচারে বারবার ধর্ম, ধর্মীয় প্রতীক ও ধর্মানুভূতির ব্যবহার করেছে। নির্বাচনি আইন লঙ্ঘনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আরও উৎসাহিত করেছে।
কমিশনের আচরণবিধি নিজে থেকে আইনত বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি নোটিশ জারি করতে পারে এবং লঙ্ঘনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রচারকারীদের স্থগিত করতে পারে।
কমিশনের এক মুখপাত্র সোমবার প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘আমরা কোনো মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করছি।’
মোদি তার ভাষণে একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মিথের কথাও উল্লেখ করেন, মুসলমানরা বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু ও মুসলমানদের সংখ্যা ১৪ শতাংশ বা ২০ কোটি।
সরকারি তথ্য দেখা যায়, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মুসলমানদের মধ্যে প্রজনন হার ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সালে ৪.৪ থেকে ২০১৯-২১ সালের মধ্যে ২.৩-এ দাঁড়িয়েছে। একই সময় হিন্দুদের ১.৯৪ এর চেয়ে সামান্য বেশি।
মোদির বিজেপি এর আগে মুসলমানদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং তাদের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এসব বিষয়ে মোদির সুস্পষ্ট নীরবতা তার চরমপন্থী সমর্থকদের সাহস জুগিয়েছে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরও ঘৃণামূলক বক্তব্য দিতে উৎসাহিত করেছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি
৭ মাস আগে