দেশি পেঁয়াজ
৬০ টাকায় থমকে আছে দেশি পেঁয়াজ, ভারতীয় ৪০ টাকা
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে গত পাঁচদিন ধরে থমকে আছে দেশি পেঁয়াজের বাজার। ভারত থেকে আমদানি হওয়ার পর খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ২০-২৫ টাকা কমলেও এখনও ৬০ টাকায় স্থির হয়ে আছে এই নিত্যপণ্যটির দাম।
সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। আজ শুক্রবার (৯ জুন) সকালে বন্দরের মোকাম ও খুচরা বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে, হিলি স্থলবন্দরের কাস্টমস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় ৭২টি ট্রাকে মোট ১ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ার আগে দেশি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও আমদানি হওয়ার পর বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। তবে গত পাঁচদিন ধরে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি
বন্দরের বাংলাহিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সাকিল ও মঈনুল জানান, যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে তখন ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ে। এখন পেঁয়াজের দাম কমে গেছে কিন্তু ক্রেতার অভাবে পেঁয়াজ ভালো বিক্রি করতে পারছি না।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা কমে ৬০ টাকায় বিক্রি করছি। গত পাঁচদিন ধরে এভাবেই দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম থমকে আছে। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি আরও বেড়ে গেলে ৩০ টাকার নিচে চলে আসবে। তবে আগে বেশি দামে কেনার জন্য দেশি পেঁয়াজের দাম কোরবানির ঈদের আগে সহসাই কমছে না।
পেঁয়াজের ক্রেতা আসাদ হোসেন জানান, কোনো কিছুর দাম বাড়লে আমরা বাঙ্গালিরা কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ি। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সেটাই দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। দাম অনেক কমে গেছে। এখন চাহিদা মতো পেঁয়াজ কিনতে পারছি। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হলে এটা সম্ভব তো না।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কেজিতে কমল ২০ টাকা
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সেলিম উদ্দীন জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ জুন হতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে মানভেদে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৬ টাকার মধ্যে। আরও দাম কমে যাবে। আশা করছি কোরবানির ঈদে ৩০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।
বন্দরের আরেক পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম জানান, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কারণেই দেশি পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। ফলে ভোক্তাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। দাম এতো হওয়ার কথা না। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় তারা এই সুযোগ নিয়েছিল। আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে আসায় বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
এদিকে হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে (আইপি) অনুমতি দিয়েছিল। এরপর ১৬ মার্চ থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। গত ৫ জুন অনুমতি দিলে ভারত থেকে আবারও পেঁয়াজের আমদানি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু
১ বছর আগে
হিলিতে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজের শুন্যতায় হু-হু করে বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের দাম।
ঈদের পর থেকে কয়েকদফা দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের।
এছাড়া দাম বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
বন্দরের আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৯ মে) বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় ভারতীয় নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতা
আবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকেও মিলেছে সুখবর।
এদিকে বন্দরের মোকামের গুদামে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় কোনো কোনো গুদামে তালা ঝুলছে, আবার কোনটা খুলে অলস সময় পার করছেন কেউ। এছাড়া ভাড়া করা গুদাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
সোমবার সকালে বাংলাহিলি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে খুচরা ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শনিবারও একই পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি ছাড়া ভিনদেশি কোনো পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।
বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মঈনুল হোসেন জানান, এখানে দেশি পেঁয়াজের কোনো মোকাম নাই। আমরা দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনে আনি। বর্তমানে ভারতের পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঈদের আগে ৩০-৩৫ টাকায় বেচা-কেনা হয়েছে। এখন কেজিতে অন্তত ২০-২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আমরা ৫০-৫২ টাকা পাইকারী দরে কিনছি।
আরেক খুচরা ব্যবসায়ী শাকিল জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবর শুনলেই ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৮-১০ টাকা কমে দেয়। যখন দেখে আসছে না তখন আবার আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ না আসলে দাম আরও বাড়বে।
ক্রেতা শফিকুল জানান, সকালে আসলে একদাম। বিকালে আসলে আরেক দাম। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে আমাদের মত মানুষদের এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। পেঁয়াজের সঙ্গে অন্যান্য জিনিসপত্রেরও একই অবস্থা।
বন্দরের আমদানিকারক ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি দিয়েছিল।
এরপর ১৬ মার্চ থেকে দেশে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হয়। এ কারণে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: হিলিতে আমদানি বন্ধের অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী বিদেশ সফরে আছেন। মঙ্গলবার (৯ মে) তারা দেশে ফিরলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনিও এমন আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই আশায় আমরা আমদানিকারকেরা গত সাত দিনে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামারবাড়ীতে আবেদন করেছি।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আমদানি স্বাভাবিক থাকলে আজ পেঁয়াজের দামে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হতো না। ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হতো না। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল।
পেঁয়াজের আরেক আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রেখেছে। আসলে কি কৃষকেরা সঠিক মুল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন? লাভ তো করেন মজুদদাররা।
তিনি বলেন, দাম বাড়ায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে শুধু ভারতীয় পেঁয়াজ না থাকার সুযোগে অসৎ ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করে আনতে সবমিলে কেজিতে ২৪-২৫ টাকা পড়বে। তাই সব বিবেচনায় সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি দিবে এই দাবি করছি।
এদিকে, সোমবার দুপুরে ভারতের ব্যাঙ্গালুরের পেঁয়াজ রপ্তানিকারক কুতুব মিয়া ও দেভানসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ভারতের নাসিকসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ মানভেদে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ রুপিতে। এখানে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আমরা প্রস্তুত আছি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে। শুনেছি বাংলাদেশে দাম বেড়েছে। এখানকার পেঁয়াজ ওদেশে (বাংলাদেশ) গেলে সেখানে দাম অনেক কমে যাবে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, শুনেছি আমদানিকারকেরা পেঁয়াজ আমদানি জন্য খামারবাড়ীতে অনলাইনে আবেদন করেছেন। সরকার হয়ত বিবেচনায় নিতে পারেন। কারণ বাজারে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, দেশের কৃষকদের উদপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দিয়েছিল। এরপর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ১৫ মার্চের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ
১ বছর আগে
ঢাকায় এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ
সরবরাহ সংকটের কারণে রাজধানী ঢাকার কাঁচাবাজারে গত বছরের তুলনায় গড়ে ৮০ শতাংশ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
৪ বছর আগে