বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী
বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশিদের ভারতের পর্যটন, চাকরি, শিক্ষা এবং চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণের সর্বপ্রথম ও আবশ্যক শর্ত হচ্ছে ভারতীয় ভিসা। এই অনুমতিপত্র দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রটোকল রক্ষা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতে একাধিক প্রবেশের অনুমিত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ভারতে ভ্রমণসুবিধা আরও বাড়িয়ে দেয়। চলুন, এই সুবিধাগুলো পেতে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায় জেনে নেওয়া যাক।
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা কী?
ভারতের নাগরিক নন এমন কোনও ব্যক্তির জন্য ভারতে দুইবার প্রবেশের অনুমতিই হচ্ছে ডাবল এন্ট্রি ভিসা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারত হয়ে অন্য কোনও দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ভিসা ইস্যু করা হয়। এ সময় প্রতিবার প্রবেশের জন্য অনূর্ধ্ব ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন সময় দেওয়া থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এই ভিসাপ্রাপ্তদের ভারতে সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে পরে প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন বা ৩ মাস বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
যাদের জন্য ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা দরকার
বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যে সকল ব্যক্তিদের এই ভিসাটি প্রয়োজন তারা হলেনঃ--> বিমান/রেল/সড়ক/সমুদ্রপথে ভারতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেতে ইচ্ছুক--> চাকরী, ব্যবসা, শিক্ষা বা পর্যটনের কারণে ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া, মাল্টা, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিকের মত ইউরোপের দেশগুলোতে গমনকারী--> সাংবাদিক--> চলচ্চিত্র ও টিভি নাট্য কর্মী
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ন্যূনতম ৬ মাসের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট। পাসপোর্টে কমপক্ষে ২টি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন হবে বিগত সমস্ত পুরাতন পাসপোর্ট। এগুলোর মধ্যে কোনো একটি হারিয়ে গেলে তার জিডি (জেনারেল ডায়েরি) কপি সঙ্গে থাকতে হবে।
- এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) বা জন্ম নিবন্ধনপত্র
- প্রার্থীর অনূর্ধ্ব ৩ মাসের মধ্যে তোলা রঙিন ছবি। ছবি হতে হবে ২/২ ইঞ্চি বা ৩৫০ বাই ৩৫০ পিক্সেল রেজুলেশনের। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্রেমে মাথা মাঝখানে রেখে চুলের উপর থেকে চিবুকের নিচ পর্যন্ত পুরো মাথা প্রদর্শিত হতে হবে। কোনও ছায়া পড়া যাবে না। ছবির স্ক্যান কপি জেপিইজি ফরমেটের হবে। আকার হবে সর্বনিম্ন ১০ কেবি (কিলোবাইট) আর সর্বোচ্চ ৩০০ কেবি।
- অনূর্ধ্ব ৬ মাসের ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল) বিলের কপি
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণস্বরূপ দেখাতে হবে:
- আন্তর্জাতিক ভ্রমণকার্ড যেমন- এসবিআই (স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া)
- ট্র্যাভেল কার্ড অথবা বিগত ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- কিংবা আবেদনকারী নামে ১৫০ মার্কিন ডলার, যা পাসপোর্টে চলমান বছরের অনুমোদনকৃত আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড-এ এন্ডোর্সমেন্ট করা থাকবে।
- আসা-যাওয়ার টিকেট এবং হোটেল বুকিং-এর নথি
- পেশা প্রমাণ স্বরূপ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রশংসাপত্র, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য অবসরের কাগজপত্র
- তৃতীয় দেশের জন্য বৈধ ভিসা
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
পরবর্তীতে অনলাইন আবেদনপত্রের সময় আপলোডের জন্য এগুলোর স্ক্যান কপি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
অনলাইনে ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসার আবেদন পদ্ধতি
অনলাইনে ভিসার আবেদনপত্র পূরণের জন্য যে কোনও ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে হবে https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa লিঙ্কে। এখানে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এ সময় যে লগইন আইডি ঠিক করা হবে সেটি দিয়ে পরবর্তীতে প্রতিবার নিজের প্রোফাইলে প্রবেশ করা যাবে।
বাংলাদেশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া পরিচালিত ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) বা আইভ্যাক রয়েছে। এগুলো হলো- ঢাকা, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, বগুড়া, এবং ঠাকুরগাঁও।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, যশোর, এবং সাতক্ষীরার কাছাকাছি বসবাসকারী আবেদনকারীরা অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের সময় ঢাকা মিশন নির্বাচন করবেন। চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালীর কাছাকাছি বসবাসকারী আবেদনকারীরা নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম মিশন। রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, এবং বগুড়ার কাছাকাছি এলাকার আবেদনকারীরা নির্বাচন করবেন রাজশাহী মিশন। আর সিলেট মিশন যারা নির্বাচন করবেন তাদের অবশ্যই সিলেটের কাছাকাছি বসবাসকারী হতে হবে।
আরও পড়ুন: ঈদে ঘরে ফিরতে অনলাইনে প্লেন, বাস ও ট্রেনের টিকেট কাটার উপায়
অনলাইন আবেদন ফর্মের উপরে ডানদিকে ডিজিটাল ছবি আপলোড করতে হবে। প্রত্যেক আবেদনকারীর জন্য একটি একক ও অদ্বিতীয় ওয়েব ফাইল নাম্বার প্রদর্শিত হবে। এই নাম্বারটি ভবিষ্যতের রেফারেন্সের জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি।
কলাম-এ-এর ব্যক্তিগত বিবরণী অংশে নাম, জন্ম তারিখ সহ অন্যান্য বিবরণ পাসপোর্ট, এনআইডি বা জন্ম সনদে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী হতে হবে। কলাম-বি-এর পাসপোর্টের বিবরণী অংশে বর্তমান পাসপোর্ট অনুযায়ী পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু করার স্থান, তারিখ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কলাম-সি-তে বর্তমান ঠিকানা, ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এখানে বর্তমান ঠিকানা অবশ্যই ইউটিলিটি বিলগুলোতে উল্লেখিত ঠিকানার সাথে মিল হতে হতে হবে। বর্তমান ঠিকানাটি এমন হতে হবে যেখানে প্রার্থী কমপক্ষে ৬ মাস ধরে অবস্থান করছেন। কলাম-ডি-তে দিতে হবে পরিবারের বিবরণ। কলাম-ই ও এফ-এ ভিসা সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।
রেফারেন্সের কলামে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে একজনের যোগাযোগের বিশদ বিবরণী দিতে হবে।
এই আবেদন ফর্মে কোনও ভুল হলে পুনরায় নতুন করে আবেদন করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। তাই ফর্ম পূরণের সময়ে সর্বাত্মকভাবে সচেতন থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন: দিল্লি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রক্রিয়াকরণ খরচ
বাংলাদেশের যে কোনও আইভ্যাক-এ ভিসার জন্য আবেদনকারী সকল ব্যক্তিকে অফেরতযোগ্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদান করতে হয়। ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য প্রক্রিয়াকরণ ফি ৮০০ টাকা। এর সঙ্গে কনভেনিয়েন্স ফি হিসেবে যুক্ত হয় স্থানীয় পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীর ধার্যকৃত চার্জ ২৪ টাকা।
অনলাইনে ফি প্রদানের জন্য যেতে হবে https://payment.ivacbd.com লিংকে। প্রবেশের সময় পরপর ২ বার ওয়েব ফাইল নাম্বার চাওয়া হবে। এরপর আবেদনের জন্য নির্বাচিত হাইকমিশন নির্বাচন করতে হয়। ভিসার আবেদন জমা এবং অর্থপ্রদানের জন্য কেন্দ্রের নাম একই হতে হয়।
তারপর ভিসা আবেদনের টাইপ নির্বাচন করে প্রার্থীর নাম, মোবাইল নাম্বার, ও ইমেইল আইডি সহ যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হয়।
আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
এবার চূড়ান্তভাবে পেমেন্টের পালা। এখানে বিভিন্ন ধরনের কার্ড, ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। এগুলো থেকে নিজের পছন্দ মতো যে কোনও মাধ্যমে ভিসা ফি পেমেন্ট করা যাবে। জমা সম্পন্ন হলে অনলাইন থেকে একটি পেমেন্ট স্লিপ দেওয়া হবে। এটি প্রিন্ট করে পরবর্তীতে আবেদনপত্রের সঙ্গে জমাদানের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
ভিসা আবেদনপত্র জমা
জমা সফলভাবে হলে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের উপরের ডানদিকে রিপ্রিন্ট অপশনে লগ ইন করতে হবে। এ সময় সেই ওয়েব ফাইল নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। অতঃপর অনলাইনে আবেদনকৃত পুরো ফর্মটির প্রিন্ট নেওয়া যাবে। প্রিন্টকৃত নথিটিতে ছবির নিচের অংশে এবং ভিসা আবেদনের শেষ পৃষ্ঠায় সইয়ের অংশে সই দিতে হবে।
অতঃপর অনলাইন পেমেন্ট স্লিপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভিসা আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকে। সাধারণত ফর্ম পূরণের ৮ দিনের মধ্যে নির্ধারিত আইভ্যাক কেন্দ্রে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ও সাক্ষাৎকার
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার দিন প্রার্থীর ১০ আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক ডাটা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রার্থীর ছবি তোলা ও প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করা হয়। সব কাজ শেষে প্রার্থীকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হয়। এটি প্রদর্শনের মাধ্যমে পরবর্তীতে ভিসাসহ মূল পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়।
ভিসা প্রাপ্তি
বায়োমেট্রিক ও সাক্ষাৎকারের পর থেকে ভিসার সর্বশেষ অবস্থা https://indianvisa-bangladesh.nic.in/ visa/StatusEnquiry- লিঙ্কের মাধ্যমে জানা যেতে পারে।
এছাড়া ০৯৬১২৩৩৩৬৬৬ অথবা ০৯৬১৪৩৩৩৬৬৬ নাম্বারেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এ সময় প্রার্থীকে অবশ্যই তার স্টিকার নম্বর বা পাসপোর্ট নাম্বার বলতে হবে।
নির্দিষ্ট দিনে ভিসাসহ মূল পাসপোর্টটি প্রার্থী নিজে সংগ্রহ করতে পারেন অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিও তার হয়ে সংগ্রহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে সেই ডেলিভারি স্লিপ এবং মূল ব্যক্তির পক্ষ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের ক্ষমতা হস্তান্তর পত্র থাকতে হবে।
পরিশেষে
বিভিন্ন দেশে পর্যটন, শিক্ষা ও জীবিকা গ্রহণের জন্য ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য এক উপযুক্ত প্রবেশদ্বার। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আইভ্যাকগুলো ভিসা প্রাপ্তির অপরিহার্য মাধ্যম। তাই প্রত্যেক আবেদনকারীর জন্য স্ব স্ব আইভ্যাক নির্ধারণ করা আবশ্যক। বর্তমানে আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন বিধায় প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোডের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সঠিক তথ্য দিয়ে অনলাইন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে। কেননা একমুখী আবেদনের এ প্রক্রিয়ায় সংশোধনের কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
৭ মাস আগে