ডর্টমুন্ড
দ্বিতীয়ার্ধের চরম নাটকীয়তা শেষে ডর্টমুন্ড বধ বার্সেলোনার
বার্সেলোনা-ডর্টমুন্ড ম্যাচ মানেই যেন সুন্দর ফুটবল, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ পসরা ও গোলের উচ্ছ্বাসের সমন্বয়ে জমজমাট এক লড়াই। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে উপভোগ্য ফুটবল উপহার দিয়েও নিয়তি মেনে শেষ পর্যন্ত ব্যথার মালা গলায় পরতে হয়েছে কালো-হলুদ জার্সিধারীদেরই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনা ও ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হওয়া সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জিগনাল ইদুনা পার্কে স্বাগকিতদের ৩-২ গোলে হারিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচের নাটক, উত্তেজনা, উল্লাস- সবই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। তাই বলে প্রথমার্ধ যে ম্যাড়মেড়ে ছিল, মোটেও তা নয়।
এদিন ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই পরপর দুটি দারুণ সুযোগ পায় বার্সেলোনা। তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে সুযোগগুলো মাঠে মারা যায়।
আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ম্যাচ এগিয়ে যাওয়ার মাঝে ত্রয়োদশ মিনিটে ফের আরেকটি সুযোগ তৈরি করে কাতালানরা। পাল্টা আক্রমণে উঠে বিপরীত পাশ ধরে অনেকটা ফাঁকায় এগোতে থাকা রাফিনিয়ার উদ্দেশে পায়ের পাতা দিয়ে বাঁকানো সিগনেচার পাস দেন লামিন ইয়ামাল। তবে সেবারও ফিনিংশের অভাবে সুযোগ হারায় দলটি।
চার মিনিট পর গোল করতে পারতেন মার্সেল জাবিৎসার, তবে সতীর্থের পাসে গতি থাকায় সুবিধা করতে পারেননি ডর্টমুন্ডের এই অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার।
ম্যাচের শুরুতে বার্সাকে চেপে ধরার চেষ্টা করলেও সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। আর তটস্থ হয়ে তাদের স্পেস কমিয়ে দিতে এবং সুযোগ পেলেই ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণে ওঠার চেষ্টায় থাকে নুরি সাহিনের শিষ্যরা।
ভুগতে ভুগতে ৪০তম মিনিটের শুরুতে দারুণ একটি আক্রমণে উঠে গোল পেয়েই গিয়েছিল ডর্টমুন্ড, কিন্তু সতীর্থের কাছ থেকে আসা উড়ন্ত ক্রসে মাথা লাগিয়েও ইনিয়াকি পেনিয়াকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন সেরহু গিরাসি।
প্রথমার্ধে বলের ওপর একক আধিপত্য ধরে রাখলেও আক্রমণে খানিকটা নিষ্প্রভ ছিল বার্সা। ফলে গোলের উদ্দেশ্যে ৮টি শট নিয়ে তার তিনটি লক্ষ্যে রেখেও কাজের কাজ করতে ব্যর্থ হয় তারা।
অপরদিকে, প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে রক্ষণ সামলানো ডর্টমুন্ড মাঝেমধ্যে দুয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও বার্সার অফসাইড ফাঁদ কিংবা ডিফেন্ডারদের নৈপুণ্যে বারবারই হতাশ হয়। ফলে স্কোরলাইনে কোনো পরিবর্তন না আনতে পেরেই বিরতিতে যায় দুদল।
১ সপ্তাহ আগে
প্যারিস জয় করে কি ফাইনালে যেতে পারবে ডর্টমুন্ড
রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে প্যারিসের মাঠে খেলতে নামছে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। জিগনাল ইদুনায় নিজেদের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ১ গোলে এগিয়ে থেকে রাতে পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামছে এদিন তেরজিকের শিষ্যরা। তবে পিএসজির দুর্দান্ত আক্রমণভাগ সামলে শেষ পর্যন্ত তারা ফাইনালে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়ে যায়।
এ সংশয়ের কারণের বেশিরভাগটা ডর্টমুন্ড নিজেরাই। চলতি মৌসুমে লিগে তাদের পারফরম্যান্স একেবারেই যাচ্ছেতাই। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফরম্যাট পরিবর্তন হওয়াতে পঞ্চম দল হিসেবে ইউরোপ সেরার এই আসরে জায়গা করে নিয়েছে তারা। তা না হলে ইউরোপা লিগে অবনমন হতো ডর্টমুন্ডের।
আরও পড়ুন: এবার লোপেতেগির দিকে নজর বায়ার্নের
অন্যদিকে, প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৩-২ গোলে হেরেও বার্সেলোনার মাঠে গিয়ে দক্ষতা, গতি ও কৌশলে ন্যু ক্যাম্প থেকে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে লুইস এনরিকের পিএসজি।
সেমিতেও প্রথম লেগে ১-০ গোলে হেরে পার্ক দে প্রান্সে ম্যাচ শুরু করবে তারা। এ দিন এমবাপ্পে-দেম্বেলেরা ডর্টমুন্ডের ‘ইয়েলো ওয়াল’ ভেঙে ফিরে আসার আরেকটি গাঁথা রচনা করতে পারেন কি না তা দেখার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব।
আজকের ম্যাচের কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে গেলে লুইস এনরিকের দলের কথাই আগে বলতে হয়। বার্সেলোনাকে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ট্রেবল জেতানো এ কোচের খেলোয়াড়ি দর্শন সম্পর্কে সবারই জানা। পজেশনাল ফুটবলের আদর্শ এ কোচের দলকে তাই জয়ের পাল্লায় কিছুটা ভারী করে রাখতে হয়।
সেক্ষেত্রে ভিতিনিয়া, জাইরে এমেরি, মার্কো আসেনসিও, ম্যানুয়েল উগার্তে ও ফ্যাবিয়ান রুইজদের কারণে মাঝমাঠ নিয়ে খানিকটা স্বস্তিতেই থাকবেন এনরিকে। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে উসমান দেম্বেলে, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ব্র্যাডলি বারকোলারা যে কী ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, তা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না।
তাছাড়া লুকা এরনান্দেস ইনজুরিতে ছিটকে গেলেও জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার সামনে আশরাফ হাকিমি, মারকিনিয়োস ও নুনো মেন্দেসের মতো রক্ষণভাগও পিএসজি সমর্থকদের দুশ্চিন্তা কমাতে ভূমিকা রাখবে।
আবার কাউন্টার অ্যাটাক হোক কিংবা লং শট, সব ধরনের আক্রমণের সামর্থ্যই রয়েছে প্যারিসের দলটির। তার ওপর আবার নিজেদের ঘরের মাঠে ‘আল্ট্রা’র সামনে যে প্রাণশক্তি নিয়ে খেলবে পিএসজি, এগুলোই ম্যাচের ভাগ্য তাদের পক্ষে গড়ার জন্য যথেষ্ট।
তবে শক্তি, কৌশল, পরিবেশ- সব পিএসজির পক্ষে থাকলে দলগত খেলায় ডর্টমুন্ডকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। প্রথম লেগে তুলনামূলক ভালো পারফর্ম করেও ডর্টমুন্ডের টিম ওয়ার্কের কাছে বারবার হতাশ হয়েছেন এমবাপ্পেরা।
ওই ম্যাচে মাট হুমেলসের নেতৃত্বে ইয়ান মাটসেন, নিকলাস জুলেরা যে সামর্থ্যের প্রমাণ দেখিয়েছেন, তাতে আজও পিএসজির আক্রমণভাগ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে ম্যাচ শেষে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রথম লেগে ১৪টি শট নিয়েও গোলের দেখা পায়নি পিএসজি।
আরও পড়ুন: প্যালেসের মাঠে ধরাশায়ী ইউনাইটেড
আবার মাঝমাঠে এমরে চান, মার্সেল জাবিৎসারদের মতো অভিজ্ঞ অস্ত্র রয়েছে তেরজিকের হাতে। তাদের সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে আছেন জেডন স্যানচো। গত ম্যাচের পুরোটা আলোই কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। সেদিন ম্যাচজুড়ে তিনি কী না করেছেন! গোলটাই কেবল পাননি। ওই ম্যাচে মোট ১৩টি সফল ড্রিবল করেন স্যানচো, ২০১৫ সালে নেইমারের (১৫) পর যা সর্বোচ্চ।
ধারণা করা হচ্ছে, আজকেও তাকে মাঝমাঠে খানিকটা স্বাধীনতা দেবেন কোচ। সেক্ষেত্রে মাঝমাঠে ৪ জন খেলাতে পারেন তেরজিক। আবার এনরিকের পজেশনাল ফুটবলের কারণে মূল লড়াইটা হবে মাঝমাঠেই। তাই বল দখলের লড়াইয়ে সমানে সমান টক্কর দিতে পারলে ওপরে থাকা ইউলিয়ান ব্রান্ডট ও স্যানচোর পায়ে বল বেশি যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর তাতে কারিম আদেয়ামি ও নিকলাস ফুলক্রুগরা গোলকিপারের ঠিকমতো পরীক্ষা নিতে পারবেন।
চরম বৈরী পরিবেশে স্নায়ু ধরে রেখে নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবেন মার্কো রয়েসরা, তার ওপরই নির্ভর করবে ম্যাচে তাদের ভাগ্য। অন্যদিকে, মাঠের সব সুবিধা নিতে যদি ব্যর্থও হন, তারপরও শুধু কদাচিৎ আসা সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে ফল পাল্টে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন এমবাপ্পে-দেম্বেলেরা।
সবকিছুর ওপরে ম্যাচের কলকাঠি নাড়বেন ডাগআউটে থাকা দুই কোচ। রসদে ভরপুর দলের সঙ্গে এনরিকের কৌশলকে ভিন্ন কৌশল দিয়েই মাত করতে হবে তেরজিকের। তা না হলে বিশ্লেষকদের ধারণা সত্যি করে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে যাবে পিএসজি।
সম্ভাব্য একাদশ
পিএসজি: দোন্নারুমা, হাকিমি, মার্কিনিয়োস, বেরালদো, নুনো মেন্দেস, ভিতিনিয়া, উগার্তে, ফ্যাবিয়ান রুইজ, দেম্বেলে, এমবাপ্পে, বারকোলা। (৪-৩-৩)
ডর্টমুন্ড: কোবেল, মাটসেন, জুলে, হুমেলস, ভল্ফ, চান, জাবিৎসার, আদেয়ামি, ব্রান্ডট, স্যানচো, ফুলক্রুগ। (৪-২-৩-১)
প্রেডিকশন: পিএসজি ৩-১ ডর্টমুন্ড।
আরও পড়ুন: শেষ লগ্নেও মায়া ছড়িয়ে চলেছেন মেসি রোনালদো
৭ মাস আগে