ফরিদপুরে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ
ফরিদপুরে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পিটুনিতে নিহত নির্মাণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
ঘটনার ২৪ দিন পরে রবিবার (১২ মে) জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলী গত ৭ মে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সময় শতাধিক ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে যেহেতু এটি আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই এ বিষয়ে আমরা বেশিকিছু বলতে পারছিনা।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, এ হত্যাকাণ্ডেরর সঙ্গে জনপ্রতিনিধি সহ অনেকের সম্পৃক্ততা ছিল। এটি বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তবে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে আগুন লাগানোর সঙ্গে দুই সহোদর জড়িত কিনা সে বিষয়ে কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মন্দিরে কে আগুন দিয়েছে সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। দুই সহোদর কিংবা অন্য কোনো শ্রমিক আগুন লাগিয়েছে কিনা সেবিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কারো কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক তালুকদার বলেন, মন্দিরে আগুন কে বা কারা দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অনেকগুলো পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে এসবস্থানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাতে সিসি ক্যামেরা থাকে এবং অগ্নি নির্বাপকের ব্যবস্থা থাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এ ধরনের কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে কারো নিকট থেকে কোনো প্রমাণস্বরুপ বক্তব্যও পাওয়া যায়নি বলে এতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা: ১৮ মাসের ইয়াসিন বাবার পর মাকে হারালো, মৃত্যু বেড়ে ১৫
গত ১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে আপন সহোদর দুই কিশোর নির্মাণ শ্রমিক আরশাদুল খান (১৯) ও আশরাফুল খানকে (১৫) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে জড়িতরা। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ আহত হন।
এ ঘটনার পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলীকে প্রধান করে প্রথমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাত সদস্যে উন্নীত করা হয়। একইসঙ্গে তদন্ত কমিটির মেয়াদও বাড়ানো হয়।
এদিকে ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় একটি মামলা করেন দুই ভাইকে হত্যার অভিযোগে নিহত দুই ভাইয়ের বাবা মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের মো. শাহজাহান খান।
এছাড়া পুলিশ সদস্যদের আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলাটি করেন মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্দিরের পূজারী কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল।
আরও পড়ুন: মন্দিরে আগুন: ফরিদপুরে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ২ জন নিহতের ঘটনায় বিজিবি মোতায়েন
৭ মাস আগে