ইউরোপীয় নির্মাতা
এয়ারবাস কেনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব এগিয়ে
উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ। আর বিক্রির প্রস্তাবনা এসেছে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে। ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এবং মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং উড়োজাহাজ বিক্রি করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ বিমানের কাছে।
জানা গেছে, প্রস্তাবনা বিবেচনায় এগিয়ে আছে ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। অন্যদিকে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটির অভিযোগ উঠায় বিক্রির দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং।
এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে উড়োজাহাজ কিনবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স?
বিমান কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের প্রস্তাব বেশি বিবেচনায় রয়েছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান জানিয়েছেন, ‘দুটি প্রতিষ্ঠানই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে তাদের উড়োজাহাজ কেনার জন্য ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ও বিমানের জন্য যেটি ভালো হবে সেটিই করা হবে।’
ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্তের মূল কারণ কমিশন: ফখরুল
বিমানমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘বোয়িংয়ের চেয়ে কম মূল্য ও প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকায় এয়ারবাস কেনার প্রস্তাব বিবেচনা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১০টি এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বোয়িং কেনার প্রস্তাব দিয়েছে।’
গত ৭ মে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যানি ম্যারি ট্রেভেলেইনের সঙ্গে বৈঠক করেন ফারুক খান।
বৈঠক শেষে বিমানমন্ত্রী জানান, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী অ্যানি ম্যারি ট্রেভেলেইন এয়ারবাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইউরোপে তারা এয়ারবাস বানায়, আমাদের বিমানের বহরে বোয়িং আছে। তারা আমাদের কাছে এয়ারবাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, বেশ ভালো প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। এরইমধ্যে বোয়িংও আমাদের ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এ বিষয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে একটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যেগুলো ভালো হবে; সেগুলো আমরা বিবেচনা করব।’
গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের আগে এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কিনতে সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। একই বছর সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকা সফরে এসেও এয়ারবাস কেনার প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান জানান। পরে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কারিগরি কমিটি।
এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, ‘এয়ারবাস এরই মধ্যে অর্থনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এবারই তারা একটি সমঝোতা স্মারকে সই করার কথা বলেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, আগে মূল্যায়ন শেষ হোক, তারপর সমঝোতা স্মারক সই হবে।’
এয়ারবাসের ‘ভালো প্রস্তাব’ নিয়ে বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে যে ঋণ দেওয়া হবে তার সুদ, সেই সঙ্গে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে বেশ ভালো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ১০টির মতো এয়ারবাস কিনতে চায়। তবে এ উড়োজাহাজগুলো কিনতে কত টাকা লাগতে পারে, তা নির্ভর করবে কীভাবে প্রস্তাব আসে তার ওপর।’
এরপর গত ১৫ মে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এয়ারবাস গ্রুপের নির্বাহী কমিটির সদস্য ওয়াটার ভ্যান ওয়ার্শের সঙ্গে বৈঠক করেন বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী।
এ বৈঠক নিয়ে ফারুক খান বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের ফ্লিট সম্প্রসারণের জন্য নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে এয়ারবাস তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবটি মূল্যায়নের জন্য বিমানে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনের ত্রুটির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনের বিষয়ে পত্রিকায় বিভিন্ন কথা এসেছে। আমরা এই মুহূর্তে বিষয়টিকে এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলে কারিগরি বিষয়গুলো জানতে বলেছি।’
এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলেও জানান ফারুক খান।
এদিকে, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে বেশ বড়সড় ঝামেলাতেই পড়েছে মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। কারিগরি ত্রুটির কারণে সারা বিশ্বে এই মডেলের সব উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শের পর থেকে নতুন করে এই ঝামেলার শুরু হয়। নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটির অভিযোগ ওঠার পর এই মডেলের উড়োজাহাজের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে বোয়িং।
অন্যদিকে অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্ত শুরু করে দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিশন (এফএএ)। এর আগে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এফএএকে জানায়, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের পর্যবেক্ষণ ঠিকঠাকমতো হয়নি। এরপরই এই তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয় উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি।
এফএএ বলছে, পর্যবেক্ষণের সময় সংশ্লিষ্টরা কোনো ভুল করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এফএএ-এর তদন্তে ত্রুটি ধরা পড়লে বিশ্বজুড়ে হাজারেরও বেশি ড্রিমলাইনার ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে ছয়টি ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং। এর মধ্যে চারটি যাত্রীবাহী বোয়িং-৭৮৭ ও দুটি মালবাহী (ফ্রেইটার) বোয়িং-৭৭৭।
এদিকে ইউরোপের উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এয়ারবাসের প্রস্তাব নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিমানকে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনায় রাজি করা প্রচেষ্টা হিসেবে ঢাকা সফর করে গেলেন কোম্পানির ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তারা চান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে তাদের প্রস্তাবের ‘যথাযথ’ মূল্যায়ন হোক।
এসব বিষয়ে গত মঙ্গলবার (২১ মে) ঢাকার একটি হোটেলে বোয়িং কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিমানের সঙ্গে বোয়িংয়ের সম্পর্ক, বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ ও এয়ারবাসের প্রস্তাবসহ দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার তুলনামূলক আলোচনা ও অর্থায়নসহ নানা দিক তারা তুলে ধরেন।
প্রাথমিকভাবে এয়ারবাসের কাছ থেকে এ–৩৫০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কিনতে আগ্রহী বিমান। পরে আরও ক্রয় করা হতে পারে। আর বোয়িংও প্রস্তাব দিয়েছে অন্তত ২টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিক্রির।
এ–৩৫০ বর্তমানে এয়ারবাসের জনপ্রিয় মডেলগুলোর একটি। ২০০৪ সালে নকশা করা এই উড়োজাহাজটি এয়ারবাস বাজারে আনে বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুর পর।
এখন পর্যন্ত উড়োজাহাজটির দুটো ভ্যারিয়েন্ট বাজারে এসেছে। একটি এ–৩৫০–৯০০ আরেকটি এ–৩৫০–১০০০। এ–৩৫০–৯০০ এ ৩০০ থেকে ৩৫০ জন যাত্রী পরিবহন করা যায়। আর এ–৩৫০–১০০০ তে যায় ৩৫০ থেকে ৪১০ জন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বর্তমান বহরে আছে ২১টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ–৮ মডেলের উড়োজাহাজ।
বিমানের বহরে এর আগেও এয়ারবাসের উড়োজাহাজ ছিল। এ-৩১০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করা হতো। বছরখানেক আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এগুলোকে বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইউএস-বাংলা বহরে যুক্ত হচ্ছে ওয়াইড বডি এয়ারবাস ৩৩০
৫ মাস আগে