ঋণ ব্যবস্থাপনা
কম রাজস্ব আদায় ঋণ ব্যবস্থাপনাকে বাধাগ্রস্ত করে: অর্থ মন্ত্রণালয়
কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে কম রাজস্ব আদায়কে চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগের সক্ষমতাও সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ঋণের স্থায়িত্বের ওপর রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ে বলে মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে বলা হয়েছে।
নথিতে আরও বলা হয়, ‘২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমার কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উৎস থেকে রেয়াতি অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
আরও পড়ুন: স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মচারীদের জন্য 'প্রত্যয়' পেনশন প্রকল্প চালু : অর্থ মন্ত্রণালয়
'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' শীর্ষক নথিতে উচ্চ সুদের হারের পরিবেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই আরেকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতি ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়াচ্ছে এবং সরকারি অর্থের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এর প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং অন্যান্য উন্নয়ন উদ্যোগে সরকারি তহবিলের প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ঋণ অফিসের বিভক্তি ঋণ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের বিষয়ে ঝুঁকি তৈরি করছে, যা দেশের আর্থিক স্থায়িত্বের ওপর প্রভাব ফেলছে।
উন্নতির লক্ষ্যে সুপারিশ
অর্থ মন্ত্রণালয় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঋণ ব্যবস্থাপনা, উন্নত রাজস্ব আদায় এবং ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প অর্থায়ন পদ্ধতি অন্বেষণে একটি বিস্তৃত ও সমন্বিত পদ্ধতির সুপারিশ করেছে।
নথিতে বলা হয়েছে, দেশের সরকারি ঋণ যাতে টেকসই থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ
অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে আর্থিক ব্যবস্থার দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এবং সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি মার্কেট (স্টক, বন্ড, অপশন এবং ফিউচার ক্রয়-বিক্রয়) লেনদেন চালু করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের সুযোগ এবং গভীরতা বাড়ানো, প্রাতিষ্ঠানিক ও গৃহস্থালি উভয়ক্ষেত্রের বিনিয়োগকারীদের সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া।
এই পদক্ষেপ সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে ও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত সংস্কার
চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নেওয়া আরেকটি উদ্যোগ হলো জাতীয় সঞ্চয়পত্র (এনএসসি) ইস্যু করার পদ্ধতির স্বয়ংক্রিয়করণ এবং কাগজের ব্যবহার কমানো।
এই পদক্ষেপটি স্ল্যাব-ভিত্তিক সুদের হার এবং স্বতন্ত্র বিনিয়োগের মতো নীতিগত পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন, সরকারের অর্থায়ন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে এনএসসিতে বিনিয়োগ কমায়।
এছাড়াও ঋণ বুলেটিন প্রকাশনার মাধ্যমে ঋণ তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। এছাড়াও এটি অন্যান্য মন্ত্রণালয়, গবেষণা সংস্থা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সাধারণ জনগণসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাজে আসছে।
মাঝারি ঋণের মাত্রা, উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ
নথিতে বলা হয়েছে, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ সরকারি ঋণের পরিমিত স্তর এবং বৈদেশিক ঋণ সংকটের ক্ষেত্রে কম ঝুঁকি বজায় থাকলেও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে।
টেকসই সরকারি ঋণ বজায় রাখা এবং দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: জাতীয় সংসদে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করুন: এ কে আজাদ
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনা অর্থ ছাড় আগের চেয়ে সহজ হবে: অর্থমন্ত্রী
৬ মাস আগে