গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব
বাইডেনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
গাজায় আট মাস ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান, জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তিন ধাপের পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (৩ জুন) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, গাজায় চলমান সংঘাত অবসানে বাইডেনের প্রস্তাবে সমর্থন দিতে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪ সদস্যের কাছে একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, ‘অসংখ্য নেতা ও সরকার বাইডেনের প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছে। তাই দেরি না করে এবং আর কোনো শর্ত ছাড়াই এই চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বানে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
বার্তাসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাওয়া খসড়া প্রস্তাবের একটি অনুলিপি থেকে জানা যায়, সংক্ষিপ্ত খসড়া প্রস্তাবে বাইডেনের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে হামাসকে এটি পুরোপুরি মেনে নিতে এবং বিলম্ব ও শর্ত ছাড়াই এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হবে।
আরও পড়ুন: বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে উভয়সংকটে নেতানিয়াহু
অন্যদিকে হামাস বলেছে, তারা এই প্রস্তাবকে 'ইতিবাচকভাবে' দেখছে। যদিও ইসরায়েল এই চুক্তি মেনে নিয়েছে কি না এ বিষয়ে কোনো তথ্য খসড়ায় পাওয়া যায়নি।
বাইডেন যখন এই ঘোষণা দেন তখন তিনি এটিকে ইসরায়েলের একটি প্রস্তাব বলে আখ্যায়িত করেন। যেখানে বলা হয়েছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা। এছাড়াও হামাস যদি সব জিম্মিকে মুক্তি দেয় তবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বাইডেনের প্রস্তাবটি হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ করবে। তবে হামাসকে নির্মূল না করে কোনো চুক্তিতে নেতানিয়াহু রাজি হলে তার সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা।
এছাড়াও নেতানিয়াহু পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিকে বলেন, বাইডেন চুক্তির একটি রূপরেখা দিয়েছেন তবে সব বিবরণ দেননি এবং এতে 'ফাঁকফোকর' আছে।
বাইডেনের প্রস্তাবিত চুক্তির প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম ছয় মাস মেয়াদি। এ সময় গাজায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চলবে। গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে নারী, বৃদ্ধ ও আহতসহ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এই পর্যায়ে আমেরিকান জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং নিহত জিম্মিদের দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়াও মানবিক সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রতিদিন ত্রাণবাহী ৬০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে।
আরও পড়ুন: হামাসকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল: বাইডেন
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি জীবিত জিম্মি ও সৈন্যদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
বাইডেন বলেন, হামাস যদি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তাহলে সাময়িক যুদ্ধবিরতি থেকে 'স্থায়ীভাবে শত্রুতার অবসান’ হবে।
বাইডেনের পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপে গাজার বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে। যুদ্ধে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ থেকে পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা জানানো হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাবে ইসরায়েল ও হামাসের চুক্তিটি মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যে চুক্তিটি বাস্তবায়নে সমর্থন করতে জাতিসংঘ ও এর সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
খসড়ায় দ্বি-রাষ্ট্র সমস্যা সমাধানের পরিষদের 'অবিচল অঙ্গীকার' পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরকে একীভূত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, জিম্মিদের ফেরানো, সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা, গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর পুনর্নির্মাণ এবং গাজার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন পরিকল্পনা তৈরি করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়গুলো এই চুক্তিতেও আছে।
চুক্তির সমর্থনে সবাইকে এক হতে আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কাউন্সিল সদস্যদের এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।’
এরই মধ্যে সোমবার জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার ও মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েল ও হামাসকে বাইডেনের প্রস্তাবটি 'গুরুত্ব ও ইতিবাচকভাবে' বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, কানাডা ও ইতালিও যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলায় ১২০০ জনের মৃত্যু হয়। সে সময় প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করে হামাস। নভেম্বরের শেষের দিকে এবং ডিসেম্বরের শুরুতে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে ১০০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এখনো প্রায় ৮০ জন জিম্মি বন্দি রয়েছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। পাশাপাশি আরও প্রায় ৪৩ জনের দেহাবশেষ রয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: আমাদের কিছুই নেই: হামলায় খাদ্যের সন্ধানে থাকা ফিলিস্তিনিরা
৬ মাস আগে