ফ্রিজার
ঈদুল আজহায় ডিপ ফ্রিজ খুঁজছেন? যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন
ঈদুল আজহায় কুরবানি পরবর্তী সময়ে সবারই দুশ্চিন্তা থাকে মাংস সংরক্ষণ নিয়ে। তাই, এই ঈদ আসার আগেই হিড়িক পড়ে যায় ফ্রিজ কেনার। ক্রেতারা বিশেষ করে ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজ কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। কেননা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় মাংস সতেজ রাখার উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে এই ফ্রিজার। আর এই চাহিদাকে উদ্দেশ্য করেই নিজেদের সেরা অফারগুলোর নিয়ে প্রস্তুতি নেয় দেশের প্রসিদ্ধ ফ্রিজার ব্র্যান্ডগুলো। এ সময় সঠিক পণ্যটি কেনার জন্য একজন ক্রেতাকে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বিষয়গুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি চলুন, বর্তমান সময়ের সেরা কিছু ফ্রীজারের দাম ও ফীচার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ডিপ ফ্রিজ কেনার আগে যে বিষয়গুলো দেখে নেওয়া জরুরি
ফ্রিজারের ধরন
চেস্ট ফ্রিজার
এই ডিপ ফ্রিজগুলো বেশ চওড়া হয় এবং খোলা হয় উপরের দিক থেকে। সাধারণত উচ্চ কর্মদক্ষতাসম্পন্ন এই ইলেক্ট্রনিক পণ্যে সামগ্রী রাখার জায়গা থাকে অনেক বেশি। স্বভাবতই বড়, ভারী বা অমসৃণ খাদ্য সামগ্রী রাখার জন্য এগুলো উপযুক্ত। সেই সঙ্গে পরিষেবা প্রদানের দিক থেকেও এগুলো বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে এই ফ্রিজারগুলোর জন্য সাধারণত বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ফ্রিজারের ভেতরে একদম নিচের অংশে সামগ্রী রাখা বা বের করা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়।
আপরাইট ফ্রিজার
হুবহু রেফ্রিজারেটরের মতো দেখতে এই ফ্রিজারগুলো খোলা হয় সামনের দিক থেকে। চেস্ট ফ্রিজারে খাবার রাখার জন্য যেখানে সাধারণত শুধু ১টি ঝুড়ি থাকে, সেখানে আপরাইট ডিপ ফ্রিজে থাকে একাধিক তাক। এতে করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার পাশাপাশি খাবারগুলো খুব সহজেই ভেতরে রাখা বা বের করা যায়।
তাছাড়া লম্বা হওয়ায় ঘরের ভেতরে এগুলো তুলনামূলকভাবে কম জায়গা নেয়। তবে ঝামেলা হচ্ছে চেস্ট ফ্রিজারের থেকে এখানে কম খাবার রাখা যায় এবং এগুলোর কর্মদক্ষতা কম হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ধারণক্ষমতা
ডিপ ফ্রিজগুলো সাধারণত কমপক্ষে ১০০ লিটার থেকে শুরু করে ৭০৮ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে-
- ছোটগুলো হয়ে থাকে ১৪২ থেকে ২৫৫ লিটারের, যেগুলো ছোট পরিবার বা মাঝে মাঝে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
- মাঝারিগুলো ২৮৪ থেকে ৫১০ লিটারের। এগুলো মাঝারি আকারের পরিবার বা যারা প্রায়শই বেশি পরিমাণে কেনাকাটা করেন তাদের জন্য।
- আর ৫৩৮+ লিটারেরগুলো ব্যবহৃত হয় একদম বড় পরিবার এবং বৃহৎ পরিসরে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য।
চাহিদা মতো ফ্রিজার কেনার পর সেটিকে ঘরের এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে, যেখানে যথেষ্ট বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে।
এনার্জি এফিসিয়েন্সি
ফ্রিজারের এনার্জি এফিসিয়েন্সি বলতে এর সর্বোত্তম হিমায়িত অবস্থার জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে বোঝায়। একটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট বা দক্ষ ফ্রিজার অল্প বিদ্যুৎ খরচ করেই দ্রুত ঠান্ডা করে ফেলতে পারে। এই দক্ষতার জন্য পণ্যের ফিচার থেকে এনার্জি স্টার লেবেলটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। এটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা (কেডব্লিউএইচ)-তে প্রকাশ করা থাকে, যার মাধ্যমে আনুমানিক বার্ষিক বিদ্যুৎ খরচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই সংখ্যা যত কম হবে ফ্রিজার ততই উচ্চতর দক্ষতা সম্পন্ন হবে। এছাড়া এনার্জি এফিসিয়েন্সি রেট (ইইআর) দিয়েও এই বৈশিষ্ট্যটি যাচাই করা যায়। এখানে ইইআর বেশি হওয়া ভালো।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত দাবদাহে যেভাবে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখবেন
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক
ফ্রিজারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে বিভিন্ন ধরনের খাবারের গুণমান ঠিক রাখতে প্রয়োজন মতো তাপমাত্রা বাড়ানো-কমানো যায়। যেমন আইসক্রিমের টেক্সচার বজায় রাখার জন্য সামান্য উষ্ণ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করার জন্য মাংসের জন্য দরকার হয় অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশের। বর্তমানে অধিকাংশ মডেলগুলোতে অ্যানালগ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর দেখা যায়।
ম্যানুয়াল/অটো ডিফ্রস্ট
ফ্রিজারে জমে থাকা বরফগুলোর গলে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ডিফ্রস্ট বলা হয়। এখানে অটো বা স্বয়ংক্রিয় ডিফ্রস্ট ফ্রস্ট-ফ্রি বা নন-ফ্রস্ট নামেও পরিচিত। অটো ডিফ্রস্টে দীর্ঘ সময় ধরে জমে ওঠা বরফগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গলে যেয়ে বরফ গলা পানি সিঙ্কহোল দিয়ে অপসারিত হয়।
আর ম্যানুয়াল ডিফ্রস্টে ফ্রিজারটি প্রথমে বন্ধ করে খাবারের সঙ্গে জমা বরফগুলো গলতে দিতে হয়। বরফ গলে গেলে খাবারগুলো বের করে পুরো ফ্রিজারের মেঝে ও দেয়ালে জমে থাকা বরফগুলো অপসারণ করতে হয়। এটি বেশ সময়-সাপেক্ষ এবং ঝামেলার ব্যাপার।
আরও পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
খাবার সুবিন্যস্ত করে রাখার ব্যবস্থা
তাঁক, ঝুঁড়ি বা ডিভাইডারের মাধ্যমে ফ্রিজারে হিমায়িত পণ্যগুলো সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষণ করা যায়। যেমন মাছ-মাংস, শাক-সবজি এবং সান্ধ্যকালীন নাস্তা রাখার জন্য এই সরঞ্জামগুলো বেশ কাজে লাগে। যে খাবারগুলো বারবার বের করতে হয়, সেগুলো সামনে বা উপরে হাতের নাগালের মধ্যে রাখার প্রয়োজন হয়। আপরাইট ফ্রিজারে বেশি তাঁক পাওয়া গেলেও এখানে বড় বড় খাদ্য সামগ্রীর জায়গা সংকুলান হয় না।
অন্যদিকে, মাঝারি আকারের চেস্ট ফ্রিজারে বড় খাবারের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকলেও ঝুঁড়ি পাওয়া যায় সর্বোচ্চ দুটি।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট নির্দেশক
ঘন ঘন লোডশেডিং বা বাড়িতে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ লাইনের কোনো ত্রুটির কারণে অনেক সময় ভোল্টেজ কম-বেশি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় গৃহস্থালী বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য একটি সতর্কীকরণ লাইট ফ্রিজারের ভেতরের তাপমাত্রার ব্যাপারে সতর্ক করে তোলে। অধিকাংশ মডেলে একটি ভিজ্যুয়াল ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যটি যুক্ত করা থাকে। এটি খাবার সংরক্ষণের একটি অগ্রীম সতর্কতা হিসেবে কাজ করে।
লক সিস্টেম
যৌথ পরিবারে ফ্রিজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বা শিশুদের নাগালের বাইরে রাখার জন্য ফ্রিজারে লক সিস্টেম থাকা প্রয়োজন। মেস, হোস্টেল এবং বাণিজ্যিক জায়গাগুলোতে এটি সবচেয়ে বেশি দরকারি। এছাড়া একসঙ্গে অনেকে ব্যবহার না করে এক হাতে যত্নের সঙ্গে ব্যবহারের জন্যও লক থাকা জরুরি। তবে ছোট পরিবারের ক্ষেত্রে এটি ঐচ্ছিক বিষয়।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
৬ মাস আগে