এসওজিএ
বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকায় বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে মৃত্যু হয় ৪০% শিশুর
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে বাতাসের মানের ওপর সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উঠে এসেছে।
হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) সর্বশেষ স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার (এসওজিএ) ২০২৪ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনিসেফের অংশীদারিত্বে দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে।
শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে বায়ুরদূষণের কারণে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বায়ু দূষণের কারণে সময়ের আগেই শিশুর জন্ম, কম ওজন নিয়ে জন্ম, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগ এবং বিভিন্ন সমস্যাসহ ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
আরও পড়ুন: ২০২১ সালে বিশ্বে বায়ু দূষণে ৮১ লাখ মৃত্যু: ইউনিসেফ
বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণে ৪০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সি ১৯ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
২০২১ সালে, বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি ৭ লাখেরও বেশি শিশুর মৃত্যুর কারণ ছিল বায়ুদূষণ। অপুষ্টির পরে এই বয়সের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে এটি।
এর মধ্যে ৫ লাখ শিশুর মৃত্যু গৃহস্থালী বায়ুদূষণ থেকে যা দূষিত জ্বালানি ব্যবহারে বাড়ির ভেতরে রান্নার কারণে সৃষ্ট। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগ আফ্রিকা ও এশিয়ায়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। খারাপ বায়ু মানের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে শিশুরা। হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে ভুগছে তারা। তবে শুধু এখনকার শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্যও বায়ু মানের উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। সেলক্ষ্যে টেকসই সমাধানগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন: শিশুদের হাইড্রেটেড-নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেক বেশি পরিমাণে ওজোনের প্রভাব রয়েছে, যা বায়ুদূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ওজোনসম্পর্কিত ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসঅর্ডারের কারণে (সিওপিডি) মৃত্যুর প্রায় ৫০ শতাংশ ভারতে (২ লাখ ৩৭ হাজার), তারপরে চীন (১ লাখ ২৫ হাজার ৬০০) এবং বাংলাদেশে (১৫ হাজার) হয়েছে।
প্রতিবেদনে শিশুস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাবগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বায়ুদূষণের প্রভাবে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় আছে শিশুরা এবং এর প্রভাব গর্ভাবস্থা থেকেই শুরু হয়ে আজীবন স্থায়ী হতে পারে। ফুসফুস, দেহ ও মস্তিষ্কের বিকাশের এই পর্যায়ে শিশুরা শ্বাসের সঙ্গে তাদের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের তুলনায় বেশি বাতাস টেনে নেয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাতাসের দূষণকারী পদার্থগুলো তাদের শরীরে বেশি প্রবেশ করে।
বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রভাব বিশ্বজুড়ে সমানভাবে দেখা যায় না। ইস্কেমিক হৃদরোগে বায়ুদূষণের প্রভাব বিশ্বব্যাপী গড়ে ২৮ শতাংশ হলেও ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ১০ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে নাইজেরিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডার মতো পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো এবং বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ৪০ শতাংশেরও বেশি।
এই বছরের এসওজিএ প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং এই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন জনস্বাস্থ্য নীতি উন্নত করার চেষ্টা করছে, তখন বাংলাদেশ জনগণের বিশেষত তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বায়ুদূষণ মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসার আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
৬ মাস আগে
২০২১ সালে বিশ্বে বায়ু দূষণে ৮১ লাখ মৃত্যু: ইউনিসেফ
ক্রমবর্ধমান হারে মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে বায়ু দূষণ। বর্তমানে বিশ্বে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকির দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এটি। জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) অংশীদারিত্বে প্রকাশিত স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার (এসওজিএ) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১৯ জুন) হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের পঞ্চম সংস্করণে দেখা যায়, বায়ু দূষণের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ৮.১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সমাজ বাদ দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ বায়ু দূষণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে লড়াই করছে।
প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, বায়ু দূষণের কারণে বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০২১ সালে এই বয়সসীমার ৭ লক্ষেরও বেশি শিশু মারা গেছে।
আরও পড়ুন: শিশুদের হাইড্রেটেড-নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের
এসওজিএ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পরিবহন, আবাসিক বাড়ি, দাবানলসহ আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়োমাস পোড়ানোর কারণে তৈরি হওয়া সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) দূষণ বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের ৯০ শতাংশেরও বেশি মৃত্যুর কারণ। এটি বিশ্বজুড়ে খারাপ স্বাস্থ্যের কারণ হিসেবে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ভবিষ্যতেও এর কারণে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
অন্যান্য দূষণকারী যেমন- গৃহস্থালী বায়ু দূষণ, ওজোন ও গাড়ির ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ।
এই প্রতিবেদনের তথ্য অবস্থার পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এইচইআই সভাপতি ডা. এলেনা ক্র্যাফট।
তিনি বলেন, ‘বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। আমরা জানি যে বায়ুর গুণমান এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের উন্নতি করা ব্যবহারিক ও অর্জনযোগ্য।’
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলার পাশাপাশি, পিএম ২.৫-এর মতো দূষণকারী পদার্থগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর সঙ্গে মিলে গ্রহকে উষ্ণতর করে তুলছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরগুলো বিশেষ করে ওজোন স্তরের পরিবর্তন স্বাস্থ্যের ওপর আরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে।
শিশুরা আছে 'অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ' অবস্থায়
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ু দূষণের প্রভাবে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় আছে শিশুরা এবং এর প্রভাব গর্ভাবস্থা থেকেই শুরু হয়।
এতে বলা হয়েছে, অল্পবয়স্ক শিশুরা বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসার ফলে নিউমোনিয়া ও হাঁপানি হয়ে বিশ্বব্যাপী পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। তবে বায়ু দূষণের প্রভাব ও মৃত্যুর হার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় বৈষম্যপূর্ণ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে বাড়ছে হাঁপানি রোগী: পরিবেশমন্ত্রী
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণ ভারতীয় শহরগুলোতে একটি গুরুতর সমস্যা।
ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কিটি ভ্যান ডার হেইজডেন বলেন, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতিদিন ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ২ হাজার শিশু মারা যায়।
পরিস্থিতির উন্নয়নচেষ্টার অগ্রগতি হচ্ছে
মানব স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি এসওজিএ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গৃহস্থালি বায়ু দূষণের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা এখন বেড়েছে এবং রান্নার কাজে ক্লিন এনার্জির ব্যবহার বাড়ায় ২০০০ সাল থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ৫৩ শতাংশ কমেছে।
এছাড়াও, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মতো বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ ক্ষতিকর প্রভাবের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী অঞ্চলগুলো এই সমস্যা সমাধানে বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক স্থাপন, কঠোর বায়ু মানের নীতি বাস্তবায়নসহ আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: চরম আবহাওয়া: মারাত্মক প্রভাবের মুখে বাংলাদেশ
৬ মাস আগে