মা নেই
বরগুনায় সেতু ধস: ৬ মাসের সাবরিন জানে না তার মা নেই
সব শিশুর কাছেই মা তার স্বর্গ। কিন্তু ৬ মাসের সাবরিন জানে না, তার স্বর্গ পৃথিবী ছেড়ে সত্যিই চলে গেছে স্বর্গে।
শনিবার বরগুনার আমতলী উপজেলায় হলদিয়া সেতুর ওপর লোহার তৈরি সেতু ভেঙে পড়ার পর কনেযাত্রী বহনকারী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়।
সেই দুর্ঘটনায় সোহেল খানের স্ত্রী রাইতির মৃত্যু হয়। এ দম্পতির ৬ মাস বয়সি কন্যা সাবরিন। এখন মায়ের যত্ন ছাড়া ছয় মাসের শিশু সাবরিনকে কীভাবে বড় করবেন তা নিয়ে চিন্তিত সোহেল।
বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাবরিন ও তার মা রাইতি। লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল তখন রাইতি কোল থেকে সাবরিনকে খালের উপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেয়। পেছনে একটি অটোতে সোহেলসহ দুইজন আত্মীয় ছিল। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসতেই কচুরিপানার ওপর তার চোখ পড়ে। দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন, সঙ্গে সঙ্গে নিজের সন্তানকে উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন: বরগুনায় পিস্তলসহ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আটক
সোহেল খান আরও বলেন, ‘এভাবে আমার সবকিছু কেড়ে নিল আল্লাহ! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’
জানা যায়, কনের বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছেলের বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাযোগে যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন।
এসময় উপজেলার ৫ নম্বর চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সেতু হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পড়ে যায় নদীতে। এসময় মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা দুই শিশুসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)।
এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর নিহত ৭ জনের বাড়ী মাদারিপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামের বাসিন্দা। এরা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়স্বজন।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান জানান, হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে শনিবার (২২ জুন) দুপুর ১টার সময় ভাগ্নি জামাইয়ের আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওনা দেন। দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে সময় হলদিয়া সেতুর মাঝখানে মাইক্রোবাসটি পৌঁছালে কচুরি পানায় ভর্তি খালে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাঁচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।’
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে নিয়ে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মানুষ মারা গেছে। নিহতদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভেঙে পড়া সেতু সম্পর্কে জানান, হালকা যান প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দৈর্ঘ্য ৮৫ মিটার এই লোহার সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেতুটির দুই প্রান্তেই গাছে সতর্কীকরণ নোটিশ টাঙানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: বরগুনায় সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় ঠিকাদারের বিচার দাবি
বরগুনায় সেতু ভেঙে কনেযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নিহত ৯
৪ মাস আগে