সংকোচনমূলক নীতি
মূল্যস্ফীতি রোধে সংকোচনমূলক নীতি নিয়ে অসন্তোষের ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক নীতি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করতে পারে, এ কথা অনস্বীকার্য।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমাপনী ভাষণে তিনি বলেন, ‘যদিও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা দরকার, তবে এটি অনস্বীকার্য যে দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি প্রবৃদ্ধিকে ধীর করতে পারে।’
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে বাংলাদেশকে অব্যাহত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য ৬ মাস অপেক্ষা করুন’: বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এ প্রেক্ষাপটে আমরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির আপাত পরস্পরবিরোধী লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য, অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে সরকার উপায় ও সামর্থ্যের ব্যবধান কমিয়ে দ্রুত উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসতে পারবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিতেও আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছি।’
তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতি; পলিসি রেট (রেপো) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ এবং ব্যাংকের সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে এবং রেমিট্যান্স ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হারে ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা রাজস্ব নীতিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করেছি, যেমন বাজেট ঘাটতি হ্রাস, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিরুৎসাহিত করা এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ।’
সরকারের গৃহীত এসব নীতিমালার ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য ওপেক তহবিলের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান অর্থমন্ত্রীর
‘এসব উদ্যোগের ফলে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করছি।’
তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় মেটাতে সরকার সম্পদ সংগ্রহে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায় নীতিমালা নির্ধারণের আগে আমরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছি।’
মাহমুদ আলী বলেন, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে সরকার কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে কর ফাঁকি হ্রাসসহ কর আদায় বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে।
‘রাজস্ব আহরণে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ সমাধানের মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণোত্তর বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সরকার জাতীয় কাস্টমস নীতিমালা সংস্কার করছে।
‘রপ্তানিবিরোধী পক্ষপাত কমাতে সহায়তা করার জন্য আমদানি শুল্কের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা হচ্ছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত শত ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে দেশের সব মানুষকে নিয়ে একের পর এক জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।’
আরও পড়ুন: বাজেট এখনও পাস হয়নি, অনেক কিছু সংশোধন হতে পারে: অর্থমন্ত্রী
৪ মাস আগে