সাপের উপদ্রব
বর্ষা-বন্যায় বসতবাড়িতে সাপের উপদ্রব মোকাবিলা করবেন যেভাবে
ভারী বৃষ্টিপাতের মৌসুমে বিশেষ করে বন্যার সময় প্লাবিত এলাকায় জনসাধারণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক সাপের উপদ্রব। দেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর কারণে গ্রামাঞ্চলগুলোর ঘন গাছপালা ও জলাবদ্ধ এলাকাগুলো রীতিমতো সাপের আবাসস্থলে পরিণত হয়। প্রতিবছর বর্ষাকালে এই সমস্যার পুনরাবৃত্তির কারণে এখন বিভাগীয় শহরগুলোও এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়। অতিবৃষ্টির ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকা পানির স্তর এই বিষাক্ত সরিসৃপগুলোকে অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এতে করে প্রায় সময় এরা ঢুকে পড়ে মানুষের বসতবাড়িতে। এই সমসাময়িক বিড়ম্বনা মোকাবিলায় অবিলম্বে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। চলুন, কীভাবে সাপকে ঘরবাড়ি থেকে দূরে রাখা যায় তা জেনে নেওয়া যাক।
বর্ষা ও বন্যার সময় সাপের উপদ্রব থেকে ঘরবাড়ি মুক্ত রাখতে করণীয়
গর্ত ও ফাটল বন্ধ করা
প্রথমেই বাড়ির ভেতরে ও চারপাশে ছোট-বড় যত ফাটল ও গর্ত আছে সব খুঁজে বের করে ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে। বাড়ির কলাম, দেয়াল, দরজা ও জানালার চারপাশের ফাঁক বা ছিদ্রগুলোতে অনায়াসেই যে কোনো সাপের জায়গা সঙ্কুলনা হয়ে যায়। এই উন্মুক্ত জায়গাগুলো বন্ধের জন্য প্রয়োজনে পেশাদার সেবা নেয়া যেতে পারে। এতে করে গর্ত বন্ধের জন্য সঠিক উপকরণ ব্যবহারের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। বাড়ির আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা এই গর্তগুলো বন্ধের মাধ্যমে একই সঙ্গে বাড়ির কাঠামোগত অখণ্ডতাও বাড়বে।
আরও পড়ুন: ট্রেকিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে নিরাপদে থাকার উপায়
আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা
কেবল সাপের অনুপ্রবেশ থেকে মুক্তি পেতেই নয়, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করা বৃহৎ পরিসরে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও জরুরি। বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে সাপের আবাসস্থল এবং খাদ্য যোগানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট হয়। ভাঙা গাছের গুড়ি ও আসবাব, কাঠ এবং লম্বা ঘাসের স্তূপ পরিষ্কারের সময় সাবধান থাকতে হবে। ঝোপ-ঝাড় ছেঁটে দেওয়া এবং আঙ্গিনা ঝাড়ু দেওয়া সহ বাড়ির চারপাশের যাবতীয় বিশৃঙ্খলা দূর করার কাজগুলো অভ্যাসে পরিণত করা উচিৎ। ঘরগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকলে ঘরগুলোর আবর্জনা এক করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। সেগুলো নিয়মিত অপসারণ করা হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ঘরবাড়িকে শুধু সাপ থেকে নয়, আরও নানা ধরণের ক্ষতিকর প্রাণী থেকে বাঁচাবে।
সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বসতবাড়ির ভেতরে ও বাইরে ভালো করে পরিষ্কার করার পর খেয়াল রাখতে হবে যে, উদ্বৃত ময়লা-আবর্জনা সঠিক ভাবে অপসারণ হচ্ছে কিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বর্জ্যগুলোও বিভিন্ন ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ ও ইদুরের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। আর এভাবেই বসতবাড়ির আঙ্গিনায় তৈরি হয় বিষাক্ত সাপের খাবারের উৎস। গ্রামাঞ্চলে ময়লা-আবর্জনা পুড়িয়ে দিতে হয় বা মাটিতে রেখে পুঁতে ফেলতে হয়। আর শহরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ময়লা নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিদিষ্ট ড্রামে রেখে মুখ ঢাকনা দিয়ে বন্ধ রাখতে হয়।
এই ডাস্টবিনগুলো থেকে কুকুর, বিড়াল বা কাক খাবার খাওয়ার সময় তা আশেপাশে এলোমেলো ভাবে ফেলে রাখছে কিনা সেদিকেও কড়া নজর রাখা উচিৎ। এছাড়া বাড়িতে বিভিন্ন পোষা প্রাণী প্রায় ক্ষেত্রে খাবার খেয়ে উচ্ছিষ্টগুলো বাইরে বিশৃৎখল ভাবে ফেলে রাখে। এগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থাকলে দীর্ঘ পরিসরে ময়লার স্তূপ বাড়তে থাকে,যার ফলশ্রুতিতে পরিবেশ নষ্ট হয়। অতিরিক্ত ময়লা জমে তা থেকে নির্গত হওয়া খারাপ গন্ধ ইদুরকে আকৃষ্ট করে। আর এই ইদুর ধরতে বাড়িতে হানা দিতে পারে বিষাক্ত সাপ। তাই চূড়ান্ত নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ময়লা সঠিক ভাবে অপসারিত হচ্ছে কিনা সেদিকে যথাযথ খেয়াল রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন: রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশের প্রত্যেক হাসপাতালে আছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
৫ মাস আগে