সিমেন্ট শিট
সিমেন্ট শিট ব্যবহার প্রাণিসম্পদ খাতে বছরে উৎপাদন বাড়াবে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি
প্রাণিসম্পদ খাতে, বিশেষ করে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামারে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করলে দেশে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সবুজ নির্মাণ: সিমেন্ট শিট যেভাবে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করছে’ শীর্ষক কর্মশালায় তারা এসব তথ্য জানান।
ইআরএফ ও বাংলাদেশ সিমেন্ট শিট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের যৌথভাবে আয়োজিত এই কর্মশালায় শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, সিমেন্ট শিট ব্যবহার বাড়লে এক দিকে উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রান্তিক লোকসানি খামারগুলো মুনাফায় ফিরতে পাবে অন্যদিকে ভোক্তারা কমমূল্যে ডিম-দুধ-মাংস খেতে পারবে।
ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নথু রাম সরকার।
এছাড়াও বক্তব্য দেন সিমেন্ট শিট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মুসাদ্দিক হোসেন ও সিমেন্ট শিট শিল্পের বড় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আনোয়ার গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াইজ আর হোসেন।
মুসাদ্দিক হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা প্রাণিসম্পদ ও কৃষি খাতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। এই দুশ্চিন্তা কমাতে সিমেন্ট শিট বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিটগুলো ৬ স্তরের হওয়ায় অতিরিক্ত গরমের সময় শেডের ভিতরের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে, এতে শেডের ভিতরের পরিবেশ তুলনামূলক শীতল থাকে। যা মুরগি ও গবাদি পশুর হিটস্ট্রোকে মৃত্যু কমিয়ে দেয়।
এই শিট ব্যবহারে খামার নির্মাণ ব্যয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, যা উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে বলে জানান তিনি।
কর্মশালায় ওয়াইজ আর হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে গবাদি-পশু হাঁস-মুরগি উৎপাদনে সিমেন্ট শিট ব্যবহারে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। দেশে সিমেন্ট শিট ব্যবহারের ফলে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদন প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। সিমেন্ট শিট মৎস্য ও গবাদিপশুকে রোগ-ব্যাধি থেকে শুধু রক্ষাই করছে না, সেসঙ্গে মৃত্যুহার প্রায় ১০ শতাংশ কমাচ্ছে।’
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে ড. নথু রাম সরকার বলেন, সিমেন্ট শিট বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব, টেকসই নির্মাণ, ব্যয় সাশ্রয়ী, তাপ ও অগ্নি প্রতিরোধকসহ নানা সুবিধার কারণে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে ও আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প এবং কৃষি খাতের অবকাঠামো নির্মাণে ঢেউটিনের পরিবর্তে সিমেন্ট শিটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণা বলছে অতিরিক্ত হিটের কারণে গবাদিপশু ও মুরগি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে উৎপাদন কমে যায়। সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি শেড নির্মাণের ফলে তাপ প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ার ফলে গবাদি পশু ও মুরগির খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে। গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খাতে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুহার কমায় ও ডিম-দুধ-মাংসের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
দেশে বর্তমানে মোট ১.২৫ লাখ পোল্ট্রি খামার আছে, যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ খামের শেড সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি। এতে বছরে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১১ শতাংশ বা ২৫৭ কোটি পিস ডিম বেড়েছে। যদি শতভাগ খামারে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করা যায় তবে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি পিস ডিম অতিরিক্ত উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এছাড়া দেশে প্রায় ৪.২৫ লক্ষ গবাদি পশুর (ডেইরি ও ফ্যাটেনিং) বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য গৃহপালিত গবাদি পশুসহ দেশে মাংসের উৎপাদন বছরে ৮৭.১০ লাখ টন।
গবেষণায় জানানো হয়, বর্তমানে দুগ্ধ ও পশু মোটাতাজাকরণ খামারগুলোর প্রায় ১৯ শতাংশ শেড সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি। যদি শতভাগ খামার সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি করা যায়, তবে দেশে বছরে মাংসের উৎপাদন অতিরিক্ত প্রায় ৬ লাখ টন বাড়বে যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সিমেন্ট শিট সেক্টরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৫টি সিমেন্ট শিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রায় ৩.৬২ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে আরও ছিলেন ইআরএফের জয়েন্ট সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, অর্থ-সম্পাদক রহিম শেখ, আনোয়ার গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) হুমায়ুন ফরিদ, আনোয়ার গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মিডিয়া এন্ড কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স) সুমন সাহাসহ আরও অনেকে।
৪ মাস আগে