ভারতবিরোধী বক্তব্য
ভারতবিরোধী বক্তব্য: সরকারকে উৎখাতে আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকার দাবি বিরোধীদের
বিএনপি নেতাসহ বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে 'সরকার পতনের' হুমকি দিয়ে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার ঘোষণার পর তারা এ ধরনের বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে এবি পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ভারতীয় ট্রেন যাওয়ার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ফুয়াদ বলেন, 'বাংলাদেশে রেললাইন উপড়ে ফেলা, বগিতে আগুন দেওয়ার রাজনীতি চলছে। দিল্লি এটা ভালো বোঝে। শুধু চুক্তি সই করলেই ট্রেন নিরাপদে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে না।’
বাংলাদেশি রেললাইন ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন চলাচল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নুরুল হক নুর। একই সঙ্গে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের পতনের জন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকবে।’
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য জনগণ প্রস্তুত: বিএনপি
এই সরকারকে হটাতে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সমর্থন করবে। সম্প্রতি এক জনসভায় নুর বলেন, 'আমরা কখনোই বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেব না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই চুক্তিকে 'ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করা' বলে অভিহিত করার কয়েকদিন পর নুর ও ফুয়াদ এই ধরনের হুমকি দেন।
ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশ সবকিছু দিয়েছে, কিন্তু চুক্তি থেকে ভারতের কাছ থেকে কিছুই নিতে পারেনি।’
জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে কাজ করা এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেল বাশারকেল্লাও নুর এবং ফুয়াদের সুরের প্রতিধ্বনি করে বেশ কয়েকটি টুইট পোস্ট করেছে।
ভারতবিরোধী বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় ট্রেনের প্রাস্তাবিত ট্রানজিট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে।
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতে বিএনপির সঙ্গে ডান-বামরা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাপের মাথাসম্বলিত ট্রেনের ইঞ্জিন এবং রক্তাক্ত রেললাইন চিত্রিত করা হয়। একই সঙ্গে ভারতীয়দের স্বার্থে পদ্মা সেতু বানানো হয়েছে বলে অদ্ভুত দাবি করা হয়েছে। এমন কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে।
কয়েক মাস আগে বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা শুরু করেছিলেন, যার প্রতিধ্বনি করেছিল জামায়াতে ইসলামী।
লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সরকারকে ভারতের 'দাস' বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে গত বছর বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ একটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জন্য ছিল বলে জানা গেছে। এরপর ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের দায়ে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতবিরোধী বক্তব্য 'একপেশে'। কারণ, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে, এরকম একটি মৌলিক বিষয় তারা বাদ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতের হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না: প্রধানমন্ত্রী
৪ মাস আগে