উন্মুক্ত চীনের বাজার
উন্মুক্ত চীনের বাজার: বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল
বিভিন্ন পদ্ধতিগত ও কৌশলগত কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার থেকে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি রপ্তানি বাড়াতে চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চীনে গুনগত, মানসম্পন্ন ও বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ২৭ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে এবং এর বাজার শেয়ার এক শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে এই প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাধার বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এর মধ্যে একটি প্রধান বাধা হলো তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের ওপর বাংলাদেশের অতিমাত্রায় নির্ভরতা। যদিও চীন ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। তবে উচ্চ-মানের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের অক্ষমতা তার রপ্তানি অর্জনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু, ভালো অংশীদার: বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। আর বাংলাদেশের রপ্তানি ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল।’
ড. রাজ্জাক বলেন, ইতালি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে উন্নতমানের পোশাককে অগ্রাধিকার দেয় চীন এবং এ ধরনের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। চীনের বাজারে প্রবেশ করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে হবে।
তিনি চীনমুখী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং বাণিজ্য চুক্তি সইসহ কার্যকর নীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বাধাগুলো হলো:
- চীনা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব।
- বিপণন, বিক্রয় ও বিক্রয়োত্তর পরিষেবাগুলোতে অপর্যাপ্ত অংশগ্রহণ।
- সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাধা
- চীনা লেবেলিং ও প্যাকেজিংয়ে কঠোর প্রবিধান।
ড. রাজ্জাক মূল্য প্রতিযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, একই মানের বাংলাদেশি পণ্যের তুলনায় চীনা পণ্যের দাম অনেক সময় কম থাকে। চীনের ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স খাত আরেকটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কারণ এই বাজারে কার্যকরভাবে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষতার প্রয়োজন।
ড. রাজ্জাক মনে করেন, বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব স্থাপনে চীনা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। এসব কারখানা চীন ও অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য পণ্য উৎপাদন করতে পারত। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে।
আরও পড়ুন: চীনে ৮-১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘোষণা বেইজিংয়ের
একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন মৃধা। তিনি উল্লেখ করেন, চীনের কিছু বিনিয়োগকারী চীনা পণ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বাজার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের উৎপাদন শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করছে।
চীনের আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ৮ থেকে ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরকালে বেইজিংয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে চীনা কারখানা স্থাপনের ফলে চীনে বাংলাদেশি রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছেন মৃধা।
বর্তমানে বাংলাদেশ চীন থেকে বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে এবং চীনে রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে। এই বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় চীনা বিনিয়োগকারীদের সিরামিক, চামড়া, ওষুধ, বৈদ্যুতিক গাড়ি, উচ্চমানের পোশাক ও গৃহস্থালি সরঞ্জামের মতো খাতে লাভজনক প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।
চীনের বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য কৌশলগত বহুমুখীকরণ, গুণগত মানোন্নয়ন ও শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি প্রয়োজন। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন এবং সম্ভাব্য চীনা বিনিয়োগ রপ্তানি বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উপকৃত করবে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর: বিজনেস সামিটে ৭০০ কোটি ডলারের তহবিল চাইবে বাংলাদেশ
৪ মাস আগে