পপ-তারকা শাফিন আহমেদ
মাইলসের শাফিন আহমেদ: পপসংগীতের আকাশে চির উজ্জ্বল নক্ষত্র
সংগীতের পথে জীবনের প্রথম পদক্ষেপ, আবার সেই পথেই শেষ। কথাটি যেন অবিকল মিলে গেছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত শিল্পী শাফিন আহমেদের সঙ্গে। গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি কনসার্টে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৪ জুলাই ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন শাফিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনিসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। চলুন, দেশ বরেণ্য এই পপ-তারকার বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ব্যক্তি জীবনে শাফিন আহমেদ
শাফিন আহমেদ ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মা দেশের স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। স্বভাবতই শাফিনের বেড়ে ওঠাটা হয়েছে গানের মাঝেই। পারিবারিক গন্ডিতে তার ডাক নাম ‘মুনা’। এ ছাড়া সংগীতাঙ্গনের যারা তাকে ছোটবেলা থেকে চেনে তারা দেখা হলে প্রথমেই ‘মুনা’ নামেই ডাকতেন।
শাফিন আহমেদের গানের হাতেখড়ি হয় তারা বাবা-মায়ের কাছেই। বাবার কাছে তালিম নিয়েছেন উচ্চাঙ্গ সংগীতের, আর মা শিখিয়েছেন নজরুলগীতি। তার আনুষ্ঠানিক গানের শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৯ বছর বয়সে। পরে বড়ভাই হামিন আহমেদসহ দুই ভাই পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সে সময় তার সামনে উন্মোচিত হয়েছিল পাশ্চাত্য সংগীতের বিস্তৃত পরিসর। আর এই অঙ্কুরেই শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ বিরতির পর ‘নীল জোছনা’ নিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন শাওন
সংগীতাঙ্গনে শাফিন আহমেদ
১৯৭৯ সালে মাইল্স ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর হামিন ও শাফিন দুজনেই যুক্ত হন ব্যান্ড দলের সঙ্গে। বেজ গিটার বাজানোর পাশাপাশি দলের প্রধান গায়ক ছিলেন শাফিন।
শুরুর দিকে তারা ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে (বর্তমান ঢাকা শেরাটন) নিয়মিত গান করতেন। তখন তাদের মনোনিবেশ ছিল শুধুমাত্র ইংরেজি গানের প্রতি। ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর মাইলসের প্রথম অ্যালবামটির সবগুলো গানই ছিল ইংরেজিতে।
১৯৮২ সালে ত্রিশ মিনিটের একটা ইন্সট্রুমেন্টাল শো’র জন্য বিটিভির পক্ষ থেকে ডাক আসে। তখন মাইলসের সেরা ছয়টি সুর রেকর্ড করে পাঠানো হয় বিটিভিতে। এই রেকর্ডগুলো টানা দুই বছর ভোর ৬টা থকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল বিটিভির সিগনেচার মিউজিক হিসেবে।
১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় মাইলসের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। সেই থেকে একের পর এক সৃষ্টি হতে থাকে কালজয়ী সব গান। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলো হলো- ‘ফিরিয়ে দাও আমারি প্রেম’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘চাঁদ তাঁরা সূর্য’, ‘নীলা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘পাথুরে নদীর জলে’, ‘ধিকি ধিকি’, এবং ‘সে কোন দরদিয়া’। চার যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে এখনও এই গানগুলো দেশ জুড়ে সমান জনপ্রিয়। এগুলোসহ মাইল্সের প্রায় ৯০ শতাংশ গানের ভোকাল ছিলেন শাফিন।
আরও পড়ুন: আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সক্ষমতার চিত্র
৩ মাস আগে