প্রধান উপদেষ্টা
ট্রাফিক সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
ঢাকার যানজট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে পুলিশ ও দেশসেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই সিটি ট্রাফিক সিস্টেম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
ঢাকার দুই কোটি মানুষের যানজট সমস্যার 'দ্রুত ও কার্যকর সমাধান' খুঁজে বের করতে ডিএমপিকে নির্দেশ দেন অধ্যাপক ইউনূস।
আরও পড়ুন: সেনা সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, ‘আমাদের যানজট কমাতে হবে। আমাদের অবিলম্বে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’
ট্রাফিক পুলিশকে প্রাথমিকভাবে কিছু যানজটবিরোধী প্রকল্প গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল, যেমন- ২-৩টি মূল সড়কে ছোট স্টেশনগুলোতে বাস থামার সময় দুই মিনিটেরও কম নির্ধারণ করা এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অন্য সড়কেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নিয়ে অন্তত একটি ট্রাফিক এলাকায় প্রয়োগের জন্য দেশের জন্য উপযোগী কিছু সমাধান খুঁজে বের করতে বলা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিগন্যালিং ব্যবস্থা ঠিক করতেও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
বৈঠকে পরিবহন ও ট্রাফিক সিস্টেম বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন তথ্যচিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহরের যানজটে দেশের বছরে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের পর ট্রাফিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে সম্পূর্ণ রূপে কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ফারুক আহমেদ।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান শুল্কহার কমানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
সেনা সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা
রবিবার প্রথমাবরের মতো সেনা সদর দপ্তরে যান অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা সেনাসদরে এসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আরও পড়ুন: প্রশাসনে স্থবিরতা, অসহযোগিতার অভিযোগ তথ্য উপদেষ্টার
এসময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ (অব.), মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধান, সামরিক ও অসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘আপনাদের দেখে যেন করদাতারা ভয় না পায়’: কর কর্মকর্তাদের প্রতি অর্থ উপদেষ্টা
জাতি পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান ইউনূস
দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং চুরি যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং দেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, তার প্রশাসন অর্থনীতিকে ‘পুনঃস্থাপন, সংস্কার ও পুনরায় চালু করতে’ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, আর্থিক খাতে সংস্কার শুরু করেছে এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করছে।
রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা এ সহায়তা চান।
আরও পড়ুন: ইউনূস ও ছাত্রনেতাদের প্রতি ফারাহ কবিরের খোলা চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের কথা বলেন, যা বাংলাদেশে আশার নতুন যুগের সূচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের একটি রূপরেখা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ভোট কারচুপি রোধ; বিচার বিভাগ, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন ও দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার সংস্কার এবং সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের চুরি করা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুর্নীতি মোকাবিলায় সরকার যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা দুর্নীতির সাগরে ছিলাম।’
মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ব্রেন্ট নেইম্যান ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ওয়াশিংটন ডিসি তার সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম ইস্যু, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফর নিয়েও আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের শ্রদ্ধা
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশন স্পষ্ট: ফখরুল
বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশনের কথা তুলে ধরেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যেসব সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন সরকার তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে বলেও আশাবাদী ফখরুল।
তিনি বলেন, 'এটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। গতকাল (বুধবার) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সংস্কার (বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার) নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করেন।’
ফখরুল বলেন, 'তিনি (ইউনূস) তার ভাষণের মাধ্যমে তার সরকারের ভিশন ব্যাপকভাবে তুলে ধরেছেন।’
বিএনপির এই নেতা জোর দিয়ে বলেন, এই সংস্কারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। ‘তাই আমরা আশা করছি এসব সংস্কার খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে।’
সরকার দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন ও জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘গণআন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসায় আমরা তাদের সাফল্য কামনা করছি। আমরা আশা করি, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন।’
আরও পড়ুন: প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বারবার আধিপত্যের রাজনীতি করছে ভারত: ফখরুল
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই কারণ এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ কারণে আমাদের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। তবে তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছানুযায়ী। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা অনুধাবন করবে এবং তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, যাতে জনগণ উপকৃত হতে পারে।’
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফখরুলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে দিনরাত পরিশ্রম করছি: প্রধান উপদেষ্টা
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনরাত পরিশ্রম করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পেতে কিছু মানুষ প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিচ্ছেন। তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিলেও আবারও তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন। ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।
ইউনূস বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাব না। আমরা সব অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন: গণ-অভ্যুথানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে: অধ্যাপক ইউনূস
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি।’
এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব।
শ্রমিকদের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলতে মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে কারখানা সচল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
ওষুধ শিল্প ও তৈরি পোশাক শিল্প দেশের গৗরব উল্লেখ করে এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধা মুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইব যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি আস্থাশীল হয়ে উঠতে পারে।’
আরও পড়ুন: দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে: ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূতকে অধ্যাপক ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটল। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
ড. ইউনূস বলেন, ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ে তুলতে একসঙ্গে অনেকগুলো কাজে আমাদের হাত দিতে হবে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনকে দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এরমধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার সবাই মুক্তি পেয়েছেন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের বড় সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়াতে মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগসহ অনেকগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ এবং অন্যান্য নিয়োগ সবকটাই সম্পন্ন হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল/সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত ৫টি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: 'মর্যাদাপূর্ণ ও অনন্য' বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান ইউনূসের
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩ ডিজিকে ওএসডি
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) তিন মহাপরিচালককে (ডিজি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তাদের ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গণভবনে জাদুঘরের পাশাপাশি শহীদদের পরিবারের আবাসনের প্রস্তাব পার্থর
ওএসডিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. শহিদুল ইসলাম, শাহিদা সুলতানা ও মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্মসচিব) গুলশান আরাকে পরিকল্পনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হিসেবে বদলির আদেশাধীন ছিলেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র, নির্যাতনের শিকারদের পুনর্বাসনে সহায়তায় আগ্রহী ডেনমার্ক
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গিয়ে গুরুতর আহতদের খোঁজখবর নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আগারগাঁওয়ের হাসপাতালটিতে পরিদর্শনে যান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জুলাই-আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
আরও পড়ুন: সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলুন: সচিবদের উদ্দেশে ইউনূস
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আট শিক্ষার্থীসহ গুরুতর আহত অন্তত ১১ জন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এসময় হাসপাতালের পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন চার শিক্ষার্থীর অবস্থা তিনি(ইউনূস) দেখেছেন।’
হাসপাতাল পরিচালক জানান, ‘চারজনেরই মাথায় গুলি লেগেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’
এ সময় ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলমসহ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডকে 'নির্মমতা' বললেন ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত হলেন লুৎফে সিদ্দিকী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে লুৎফে সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিনি উপদেষ্টার মর্যাদার সমতুল্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ শিগগিরই স্বাভাবিকতা, স্থিতিশীলতা, ঐক্য ও সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে: চীনা রাষ্ট্রদূত
লুৎফে সিদ্দিকী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অ্যাডজান্ট প্রফেসর এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ভিজিটিং প্রফেসর-ইন-প্র্যাকটিস।
এর আগে তিনি ইউবিএস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এফএক্স, রেটস অ্যান্ড ক্রেডিটের উদীয়মান বাজারের গ্লোবাল হেড এবং বার্কলেস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
২০১২ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তাকে ইয়াং গ্লোবাল লিডার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি পুঁজিবাজার, অবকাঠামো বিনিয়োগ, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক ঝুঁকি বিষয়ে কাউন্সিল এবং স্টিয়ারিং গ্রুপে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে দাভোসে অফিসিয়াল প্রোগ্রামসহ ডব্লিউইএফের এক ডজনেরও বেশি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন।
লুৎফে এলএসই সিস্টেমিক রিস্ক সেন্টার, এনইউএস সেন্টার ফর গভর্নেন্সের উপদেষ্টা বোর্ড এবং ইউডব্লিউসি আটলান্টিক কলেজ এবং এনসিসি লন্ডনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
তিনি ব্রেটন উডস কমিটি, সিএফএ ইনস্টিটিউটের ফিউচার অব ফিনান্স এবং ওএমএফআইএফ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ফোরামেও ভূমিকা রাখেন।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় লুতফের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার তাকে সিআইপি হিসেবে মনোনীত করেছে।
আরও পড়ুন: কুয়েত আরও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেবে: রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূতসহ ২৪ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
প্রধান উপদেষ্টা বিদেশ যাওয়া-আসার সময় বিমানবন্দরে থাকবেন যারা
প্রধান উপদেষ্টা সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যাওয়া ও দেশে ফেরার সময় যেসব কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে হবে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সম্প্রতি এ বিষয়ে অনুসরণীয় রাষ্ট্রাচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৯০০ জনের বিরুদ্ধে তিন মামলা
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার এ মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশযাত্রা ও সফর শেষে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন- উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠতম একজন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, ডিপ্লোমেটিক কোরের প্রধান, স্বাগতিক দেশ/দেশগুলোর মিশন প্রধানরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধান ও মুখ্যসচিব।
বিমানবন্দরে আরও থাকবেন- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার প্রধান।
এছাড়াও এ বিভাগের ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের জারি করা নির্দেশাবলি বাতিল করা হয়েছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মেয়াদ শিগগিরই শেষ হচ্ছে, আলোচনায় ৪ প্রার্থী
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বেশির ভাগ দলের দাবি নির্বাচনের সময়সীমা
প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলাদা মত বিনিময় সভায় এসব দাবি জানায় দলগুলো।
গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচার ও দুঃশাসন প্রতিরোধে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় অঙ্গকে ঢেলে সাজাতে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও বিভিন্ন দাবির বিষয়ে পৃথকভাবে লিখিত প্রস্তাব পেশ করে। দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও তাদের আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশি সময় নেওয়া উচিত নয়: জামায়াত আমির
এরমধ্যে সাতটি ইসলামি দল জানায়, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকার এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন দুর্গাপূজায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ছয়টি ইসলামী দলের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা দফায় দফায় মত বিনিময় সভা শুরু করেন।
সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্ম উপদেষ্টা এ এফ এম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
খেলাফত মজলিস, নিজামে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নেতারা বেলা ৩টায় যমুনা পৌঁছান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
এরপর বিকেল ৪টায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমন্বয় জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বা পূর্বাভাস দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘এই রোডম্যাপ ছয় মাস বা নয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে আমরা জোর দিয়েছি। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে ততই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল এবং দেশের জন্য মঙ্গল।’
ওলি জোর দিয়ে বলেন, শান্তি, সুশাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার আগে নির্বাচন পরিচালনা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আগে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখতে সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন নিয়ে এলডিপির বক্তব্যের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিটি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি উত্তর দিকে যাই আর আপনি দক্ষিণে যান, তাহলে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সব পক্ষের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।’
এলডিপি নেতা আরও বলেন, তারা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে ৮৩ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে তারা বলেছেন যে, ছোটখাটো কারণে যদি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা যায়, তাহলে হাজার হাজার ছাত্র-মানুষ হত্যা এবং ১৫ বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর গুমের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না? তাদের নিবন্ধন বাতিল করা একান্ত প্রয়োজন।
ওলি বলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে আগামী দিনে আরও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিগগিরই নির্বাচনের দিকে যাবে: বিএনপি
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছি, তারা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়... যারা হাসিনার অনুগত ছিল তাদের বরখাস্ত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়নি। কেবল তাদের এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে স্থানান্তর করা সমস্যার সমাধান করবে না ... তারা দেশের শত্রু, তাদের জেলে ঢোকানো উচিত।’
ছয় দলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, 'আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা তাকে (ইউনূস) বলেছি যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে এবং নির্বাচন আয়োজনে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে।’
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর তারা অনতিবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন করবেন।
মামুনুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন এ জন্য প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি যুক্তিসঙ্গত সময়সীমা গঠনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমার কথা বলিনি। আমরা নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করিনি।’
মামুনুল হক বলেন, বৈঠকে ইসলামি দলগুলো দুর্গাপূজায় মন্দির ও পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় তিনশ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, নির্বাহী আদেশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের কারণে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এর আগে গত ১২ আগস্ট শাহ আলমের নেতৃত্বে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক বাম জোট ও এনডিএমের সিনিয়র নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ বিষয়ে দায়মুক্তি কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট