অপ্রতুল
বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল
চলমান ভয়াবহ বন্যায় ফেনীসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আটটি জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমাণ অপ্রতুল বলে জানা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, নগদ ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ১৯ হাজার ৬৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, যে পরিমাণ সহযোগিতা প্রয়োজন, সে তুলনায় খুব কমই এখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছেছে। সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দ্রুত স্পিডবোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারের আবেদন করা হয়
বন্যা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে দুর্গত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে অনেকের মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে বেশ কিছু মোবাইল টাওয়ার বিকল্প উপায়ে চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় নেটওয়ার্কেও সমস্যা হচ্ছে। জেলায় বসবাস করা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দেশের বাইরে ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত স্বজনরা উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন: রাজস্ব বাড়াতে করজাল সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান
প্রবল বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলা।
ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের ১২ জেলায় বন্যায় ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরের ফসল তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে প্রাথমিকভাবে এ প্রতিবেদন দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, ১২ জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ হেক্টরের আমন ধান, ৫৭০ হেক্টরের বোনা আমন ও ১২ হাজার ৯১০ হেক্টরের আমন বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৬৮ হাজার ২০৯ হেক্টরের আউশ, ৯ হাজার ৫১৯ হেক্টরের শাক-সবজি, ৩৮ হেক্টরের আখ এবং ১৯১ হেক্টরের পান প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সহযোগিতার জন্য পৌঁছেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছাসেবীরাও সেখানে যাচ্ছেন।
এছাড়া বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসি:
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভি-স্যাটসহ বিকল্প উপায়ে প্রচেষ্টা চালানোর পরও অচল মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যার তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় দেশের ১২টি জেলার ২ হাজার ২৫টি মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর:
অন্যদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালুসহ আটটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যায় দুই বিভাগে ৪০টি উপজেলার ২৬০টি ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়। এসব এলাকায় ১১৯৬টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। আক্রান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং হাসপাতালগুলোতে জরুরি মেডিকেল টিমসহ পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও অ্যান্টি-ভেনমসহ অন্যান্য জরুরি ওষুধ মজুদ আছে। এসব এলাকার সব স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ:
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনী, কুমিল্লা অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ার মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ডাক, টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
প্লাবিত ফেনী, কুমিল্লা ও অন্যান্য অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিশ্চিতকরণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাসমূহে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এছাড়াও বিটিআরসি, বিটিসিএল ও টেলিটক হতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান: দলীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, অবহেলিতদের অগ্রাধিকার
স্থানীয় সরকার বিভাগ:
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক বন্যার্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের পাশের থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর ও মৌলভীবাজারসহ বন্যা উপদ্রুত জেলাসমূহে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপপরিচালক, স্থানীয় সরকারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুইজন সদস্য হলেন- সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম ইউএনবিকে জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় সরকার সার্বিকভাবে মানুষের জালমাল রক্ষায় চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বন্যার বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'প্রথম হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব মানুষের জীবন বাঁচানো। মানুষের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেগুলো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সঙ্গে কাজ করে, তাদের সবাইকে নিয়োজিত করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব ছাত্র ছিলেন তারাও উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সার্বিকভাবে প্রশাসন চেষ্টা করছে, সরকার চেষ্টা করছে যাতে মানুষের জানমাল, গবাদি পশু ইত্যাদি যাতে রক্ষা করা যায়।'
'ত্রাণ হিসেবে নগদ এবং চাল বরাদ্দের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে। দুর্গত অঞ্চলে সব শক্তি নিয়োজিত করা হয়েছে। বৃষ্টি কমলে দ্রুত পানি নামবে, তখন আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করব।'
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পূর্বাভাস ছিল না, এটি ছিল ফ্ল্যাশ ফ্লাড। কেউ বলছেন উজান থেকে ভারতীয় অঞ্চল থেকে পানি নেমে এসেছে, বন্যা যেভাবে প্রাকৃতিকভাবে হয়, খুব দ্রুতই হয়েছে। পানি এত দ্রুত বেড়েছে যে অনেক এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'এ বিষয়েও যোগাযোগ হচ্ছে। আমি সঠিকভাবে আপনাদের কাছে বলতে পারছি না। শুনেছি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের ওখানেও বন্যা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।'
ফারুক-ই আজম বলেন, 'ভারত বাঁধ খুলে দিয়েছে এটি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে। সরকারিভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ২৬০ মিলিয়ন ডলার
২ মাস আগে