সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
২ মাসের মধ্যে নদীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশ পানিসম্পদ উপদেষ্টার
আগামী ২ মাসের মধ্যে দেশের নদীর সঠিক সংখ্যা চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার রাতে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং সংকটাপন্ন নদ-নদীগুলোর দখল ও দূষণমুক্তকরণ নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে আগামী ২ মাসের মধ্যে সময়ভিত্তিক, ব্যয় সাশ্রয়ী, কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে এবং পরবর্তীতে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদ করার কথা জানান পানিসম্পদ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, যৌথভাবে প্রণয়নকৃত তালিকা জনমত ও আপত্তি দাখিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত আপত্তি গ্রহণপূর্বক প্রযোজ্যক্ষেত্রে শুনানি গ্রহণ করতে হবে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীর তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করবে। প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর তালিকা করে দূষণ থেকে পরিত্রাণে কর্ম পরিকল্পনা করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সব নদীর জন্য ‘হেলথ কার্ড’ প্রস্তুত করবে, যা নদীর প্রাণসত্ত্বার পরিচয়। অভিযান পরিচালনায় ও পরবর্তীতে আবারও দখল ও দূষণ রোধ করতে এলাকাবাসী, তরুণ প্রজন্ম, সামাজিক সংগঠন, এনজিওদের সম্পৃক্ত করতে হবে ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে। সব অফিসে প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের ফোল্ডার ও প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার পরিহার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ ঢাকা সার্কুলার নৌপথের প্রস্তাবনার সর্বশেষ অবস্থা ও এই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মত বিনিময় করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করবে।
তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের আইনের সংশোধনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ব্যয়সহ চলমান ও বাস্তবায়িত নদী খনন প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তালিকা ও প্রভাব বিষয়ে মতামত ও প্রভাব জানাতে হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী রক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানি বিশেষজ্ঞদের পরিমাপে দেশে মোট নদীর সংখ্যায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-৮৫৩৯/২০২১ এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা কীর্তনখোলা, রূপসাসহ গুরুত্বপূর্ণ নদীসমূহের পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাপ্রশাসকদের নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, অবৈধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধে এবং পরিবেশ বান্ধব পাটের ব্যাগের ব্যাপক প্রচলনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ক্যাম্পেইন করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের পরিচালনার সভায় নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় কমিশনাররা বক্তব্য রাখেন।
অভিন্ন নদীর পানি ছাড়ার আগে আগাম বার্তা দেয়নি ভারত: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
অন্তবর্তীকালীন সরকারের বন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভারতের অভিন্ন নদীর পানি ছাড়ার আগে আগাম বার্তা দেওয়ার কথা থাকলেও এবার তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ার আগে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দিতে হবে।’
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাঙেরগাওয়ে খোয়াই নদীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৯০০ জনের বিরুদ্ধে তিন মামলা
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের বৈঠকেও এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে মনুষ্যসৃষ্ট কোনো দুর্যোগ না হয়, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে জানানো হবে।
ড্রেজিং ও নাব্যতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নদী ড্রেজিংয়ের ব্যপারটা উজান থেকে ভিন্ন হবে। নদী ড্রেজিং হবে না পলি ব্যবস্থাপনার অন্যান্য ব্যবস্থায় যাবে, তা একটি বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু বিগত দিনে এ বিষয়ে কোনো জোর দেওয়া হয়নি।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, হবিগঞ্জ শহরকে বাঁচাতে হলে খোয়াই নদীকে রক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। এ নদী রক্ষায় অল্প টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে বেশি টাকার প্রয়োজন হলেও তা করা হবে। এছাড়া পুরোনো খোয়াই নদীকে দখলমুক্ত করা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, ফেনীতে যে প্লাবন হচ্ছে তা কমে গেলেও অবৈধ স্থাপনার জন্য নদীপথ সংকুচিত হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
এর আগে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বৈঠকে স্থানীয় ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: যে যেভাবে পারেন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান: জিএম কাদের
ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, সাবেক মন্ত্রী রমেশ কারাগারে