দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব
বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু, ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
দেশের ১১ জেলায় চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এ তথ্য জানান।
বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ত্রাণ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। এসব জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি।
আরও পড়ুন: সংকটের সময় লাভ না করে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান: ক্যাব
দুর্যোগ সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যায় মোট ১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন।’
কামরুল হাসান আরও জানান, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে সচিব বলেন, বন্যা দুর্গত ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ টন। এছাড়া শুকনো ও অন্যান্য খাবারের ১৫ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুর খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে জানিয়ে সচিব বলেন, 'আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীসংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে এই অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী ও হালদা নদীসংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কামরুল হাসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৭০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন।
এছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলার প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোষ্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সচিব।
ত্রাণ সচিব আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। উপদেষ্টা বর্তমানে ফেনীতে অবস্থান করছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি ভি-স্যাট চালু করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সচিব বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষ কিংবা গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে এবং তারা প্রস্তুতি নিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহযোগিতায় ১ দিনের বেতন দিচ্ছেন কুয়েট শিক্ষকরা
২ মাস আগে