মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা নষ্ট করে ইজারা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় সমস্যা আছে, দয়া করে আপনারা আমাদের জানাবেন। আমরা সেখানে যাব এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এএলআরডি, বারসিক ও বেলা’র আয়োজনে হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানবাধিকার সুরক্ষায় ‘জাতীয় হাওর সংলাপ ২০২৪’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
হাওর জীববৈচিত্র্যের আধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলে ১৪৩ প্রজাতির দেশি ও ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ রয়েছে। কয়েক প্রজাতির মিঠা পানির চিংড়িসহ বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ, শামুক, ঝিনুক রয়েছে। আরও রয়েছে- দেশের মোট গবাদি পশুর ২২ শতাংশ, হাঁস ২৪ শতাংশ, ১২৯ দেশীয় ও ১২৮ প্রজাতির বিদেশি পাখি, ২৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণি, ৪০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং কয়েক প্রজাতির ধান।
উপদেষ্টা আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর চাষের মাছ নিয়ে খুব বেশি বলা হতো। এছাড়া দেশি মাছের কথা বললেই হাওরের মাছের কথা চলে আসে। অন্যদিকে যখন মৎস্যজীবীর কথা বলা হয় তখন প্রকৃত মৎস্যজীবী, অরিজিনাল মৎস্যজীবী- এরকম কথা চলে আসছে। এর মানে হচ্ছে এ পেশায় অনেকেই অন্যায়ভাবে প্রবেশ করেছে। যারা সত্যিকারের মৎস্যজীবী তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ৪৭ লাখ সুবিধাভোগীর স্মার্টকার্ড করতে ডিসিদের সহায়তা চাইলেন উপদেষ্টা
তিনি বলেন, হাওর নিয়ে সবসময় টানাটানি হয়, মন্ত্রণালয়গুলো কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। হাওর রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
এছাড়া হাওর রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, হাওরে যেমন মাছ ও ধান আছে, তেমনি প্রাণিসম্পদও রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরে উফসি ও হাইব্রিড ধানে কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। মেশিন দিয়ে ফসল কাটা হচ্ছে। এই মেশিন হাওরে নামার ফলে মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছড়া আমি কৃষি উপদেষ্টাকে জানিয়েছি- মা মাছ রক্ষার্থে হাওরের ধানে যেন কীটনাশক না দেওয়া হয়।
মানবাধিকারকর্মী ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, শেয়ার দ্য প্ল্যানেট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তেৎসু চুচুই, বেলা’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ড. লেলিন চৌধুরী, অধ্যাপক আফজালুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রধান মো. বেলাল উদ্দীন বিশ্বাস প্রমুখ।
এছাড়া সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চলের কৃষক, জেলে, আদিবাসী, হাওরের স্থানীয় প্রতিনিধি, সাংবাদিক, উন্নয়ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে কাজ করবে নয়া দিল্লি: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
১ সপ্তাহ আগে
জেলেদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জেলেদেরকে যদি সুদমুক্ত ঋণ দিতে নাও পারি, তাহলে স্বল্প সুদে যাতে ঋণ দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে। তবে কাজগুলো করতে আমাদের সময় দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বছরে তিনবার জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয়। এই নিষেধাজ্ঞাকালীন তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা বা সুযোগ সুবিধা বাড়ানো যায় কিনা সে পরিকল্পনাও রয়েছে।
আরও পড়ুন: সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে: উপদেষ্টা
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সদরের ভোলার খাল-সংলগ্ন বালুর মাঠে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ আয়োজিত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪’ উপলক্ষে জেলেসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনদের নিয়ে সচেতনতা সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ইলিশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইলিশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্পদ। যে জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়, ওই জেলার মানুষ গরিব হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নয়, ইলিশের বাড়ি ভোলায়। বাইরের জেলেদের বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার নেই। তাদের বিতাড়িত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মা ইলিশ রক্ষায় আইন অমান্যকারীদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান, কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার মোহাম্মদ শাহিন মজিদ, নৌ বাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক, নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মোল্লা এমদাদুল্লাহ।
স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব, জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ও জেলে সর্দার বশির গাজী।
অনুষ্ঠানে জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ৫ শতাধিক জেলে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক ও নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: পরিবেশ উপদেষ্টা
১ মাস আগে
সারাদেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ২২ দিন: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ১৩ অক্টোবর-৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নিষিদ্ধ থাকবে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বিপণন ও বিনিময়।
তিনি বলেন, আর এই ২২ দিন জেলেদের শাস্তি দিয়ে নয় বরং সচেতনতার মাধ্যমে ইলিশ মাছ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
শনিবার (৫ অক্টোবর) শরীয়তপুরে ‘ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৪’ উপলক্ষে জেলেসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সচেতনতা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিকল্পিত: শিক্ষা উপদেষ্টা
তিনি বলেন, কিছু অসাধু চক্র তাৎক্ষণিক মুনাফা অর্জন করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, জেলেদের সরকারি সহায়তার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইলিশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মিঠা পানিতে ডিম ছাড়ে। এ সময় যদি ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা যায় তাহলে ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
এসময় ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার আহ্বান জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাদিয়া জেরিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী, শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাদি উজ্জামান, মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ীরাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার।
আরও পড়ুন: যেতে না পারা প্রায় ১৮০০০ কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা
২ মাস আগে
আমদানিতে অনিচ্ছা, দাম কমানোতে আগ্রহী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
আমদানি নয়, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াটাই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো গোশত আমদানি করতে চাচ্ছি না। বরং গবাদিপশুর উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে গোশতের দাম কমানোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ফরিদা আখতার বলেন, ‘ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ থেকে নতুন করে হিমায়িত গরুর গোশত আমদানির পক্ষে একটি মহল তৎপরতা শুরু করেছে। তারা নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। আমরা কোনো গোশত আমদানি করতে চাচ্ছি না। কারণ বিদেশ থেকে এসব গোশত এসে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে গরুর গোশতের পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। ফলে এসব খাবারে নানা রোগ-ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ২০-২৫ লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়। দেশে লাখ লাখ গবাদিপশুর খামারি রয়েছে। তবুও দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে গোশত আমদানি করলে প্রথমে হয়তো কম দামে পাওয়া যাবে, কিন্তু গোশতের চাবিকাঠি চলে যেতে পারে অন্য দেশের কাছে। লাখ লাখ লোক গবাদিপশু পালন করছে। এই বাজারটা নষ্ট করে ফেললে আমাদের সমাজটা কোন অবস্থায় পড়বে এটাও চিন্তা করার বিষয়।’
জনগণ যাতে স্বল্প ও ন্যায্যমূল্যে গোশত খেতে পারে এবং খামারিরা টিকে থাকতে পারে সেজন্য উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে গোশতের দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের কাছে সহজলভ্য করা প্রয়োজন। সেজন্য এগুলোর নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে।
সিন্ডিকেট ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে পশু খাদ্য, গোশত-ডিমের দাম বেড়ে যায় অভিযোগ করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’
জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে বেশি নজর:
ফরিদা আখতার বলেন, ‘চাষের মাছ উৎপাদনে আমরা শীর্ষে বা অমুক চাষের মাছ ভালো করছে, এসব তথ্যে আমি মুগ্ধ না। আমাদের দেশি মাছ হাওর-বাঁওড় ও মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনের দিকে বেশি নজর দিতে চাই। দেশি তিন শতাধিক মাছ ছিল। সেগুলো ফিরিয়ে আনতে চাই। আবার মাছ, পোলট্রি ও মাংস খাতে ফিড নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এর নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় নদী থেকেই আসত বেশির ভাগ মাছ। কিন্তু এখন মোট উৎপাদিত মাছে নদীর অংশ একেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক জলাধার থাকলেও তা মাছ উৎপাদনে সফলভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, নদীদূষণের কারণে মাছের উৎপাদন কমছে।’
এসব সমস্যার সমাধান পেতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান মৎস্য উপদেষ্টা।
পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ:
উপদেষ্টা বলেন, ‘খামারিদের খরচ কমাতে পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলে কৃষি খাতের মতো ভর্তুকির বিষয়েও আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি। এই খাতের প্রান্তিক চাষি ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হবে। উন্নত জাত লালন-পালনকে সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশীয় জাতের পশু টিকিয়ে রাখতে করণীয়গুলোও নির্ধারণ করা হবে।’
গবাদিপশুর চিকিৎসা:
ফরিদা আখতার বলেন, ‘ভেটেরিনারি হাসপাতালে মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা সঠিকভাবে না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। গবাদিপশুর চিকিৎসক সঠিক তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা অভিযোগ থাকলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ:
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আমরা কঠোর। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। এই সরকারের সময় কেউ দুর্নীতি করলে পার পাবে না। তাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না। কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের চাহিদা মেটানোর পর হবে ইলিশ রপ্তানি:
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনো ইলিশ না যায় তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। ইলিশ নিয়ে গর্বের পাশাপাশি আমাদের এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ অবস্থায় ইলিশের প্রজননস্থল ও অভয়াশ্রমগুলোর নিরাপত্তা ও সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ও জাটকা ইলিশের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে আমরা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। সেখানে আমরা দেখছি, প্রচুর মাছ অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে। বেশিরভাগই যাচ্ছে ভারতে। সেটি বন্ধে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। অবৈধ পথেও যাতে কোনো ইলিশ যেতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোর থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি।’
স্বল্প সময়ের মধ্যে ইলিশের দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান ফরিদা আখতার।
পোলট্রি খামারিদের সহযোগিতা:
উপদেষ্টা বলেন, ‘পোলট্রি খাতে এক দিনের বাচ্চার যে দাম, সেটি কয়েকটি কোম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ। বড় কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় ছোট ও ক্ষুদ্র খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে না। খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসব খাতে নারীরা জড়িত রয়েছেন বেশি। ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলে দেশের নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।’
বন্যায় প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি:
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ঋণের কিস্তি তিন মাস স্থগিত রাখার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বন্যাদুর্গত কুমিল্লা জেলা সরেজমিনে গিয়ে খামারিদের সাথে কথা বলেছি। এ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের বিষয় আমরা ভাবছি। আকস্মিক বন্যায় মৎস্য খাতে ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ৪১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর পশুপাখির নানা ধরনের রোগ হয়। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও আর্থিক সুবিধা দিতে না পারলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান ফরিদা আখতার।
তিনি আরও বলেন, ‘পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান এবং ঘাসের কাটিং বিতরণ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর। একইভাবে মৎস্য খাতেও চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম করা হবে।’
এছাড়াও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, মৎস্য খামারগুলোকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা এবং চাষিদের মধ্যে পোনা বিতরণ করা হবে বলেও জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।
৩ মাস আগে