শিক্ষকের বেত্রাঘাত
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখ হারাল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী, ক্ষতিপূরণ দাবি ভুক্তভোগীর পরিবারের
ফেনীর দাগনভূঞায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাম চোখও।
এ ঘটনা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।
শিক্ষার্থী মাহেদুল হাসান (৯) উপজেলার জগতপুর এলাকার ডাক্তার বাড়ির প্রবাসী রেয়াজুল হকের ছেলে। আর অভিযুক্ত শিক্ষক তাপস মজুমদার উপজেলার রামানন্দপুর গ্রামের কামিনী মজুমদারের ছেলে।
আরও পড়ুন: দুই নারীকে বেত্রাঘাতে ইসলামের ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়নি: মাহাথির
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর মা হাসিনা আক্তার বলেন, গত ১৪ মে ওয়াজেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। গণিতে ভুল করার অভিযোগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাপস মজুমদার ওই ছাত্রকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেত্রাঘাত করে। এসময় কঞ্চির একটি অংশ তার ডান চোখে ঢুকে যায়। পরে ছাত্রের চিৎকারে স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দাগনভুঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফেনীতে রেফার করেন। এক পর্যায়ে মাহেদুল হাসানকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
সেখানে চক্ষু পর্যালোচনা শেষে ডা. নাফিস আহমেদ শাহরিয়ার বলেন, মাহেদুলের একটি চোখ পরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। অন্য চোখটি বাঁচাতে হলে তাকে দ্রুত অপারেশান করতে হবে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়ে চিকিৎসা নিলে ভালো হতে পারে। টাকা না থাকায় প্রবাসী পিতা রেয়াজুল হক উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। এ পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের বেত্রাঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ নষ্টের শঙ্কা
আহত মাহেদুল হাসানের বাবা রেয়াজুল হক বলেন, শিক্ষক তাপস মজুমদারের বেত্রাঘাতে আমার ছেলের ডান চোখ মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। আমি ওই শিক্ষকের শাস্তি চাই। চিকিৎসা খরচের জন্য দুই দফা সমঝোতা বৈঠক হলেও প্রয়োজনীয় টাকা দিতে রাজি হননি শিক্ষক তাপস মজুমদারের ভাই রাজেস মজুমদার।
বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক তাপস মজুমদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জানা যায়, তিনি অফিসিয়াল ছুটি নিয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত বেত নির্দেশক কাঠি হিসেবে ক্লাসে ব্যবহার করা হয় বলে জানান। বিদ্যালয় কমিটির পক্ষ থেকে তিনি সমঝোতার চেষ্টা করেছেন।
ফেনী সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, এ ঘটনার আমাকে প্রধান করে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া শিক্ষা কর্মকর্তাসহ একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। একটি প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর মারার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৪
ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। বর্তমানে মামলা চলমান। তবে মামলা চলাকালীন কীভাবে ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে গেলেন সে ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
১ মাস আগে