প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের নতুন অগ্রযাত্রার ভালো অংশীদার হতে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠনে একসঙ্গে কাজ করতে চায় ওয়াশিংটন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভালো অংশীদার হতে চাই। বাংলাদেশের প্রয়োজনে আমরা সবকিছু দ্রুত কার্যকর করব।’
ব্লিঙ্কেন বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের 'অপরিসীম' শ্রদ্ধা রয়েছে এবং একটি সংকটময় সময়ে দেশের দায়িত্ব নেওয়ায় তার প্রশংসা করেন তারা।
ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তিনি দেশের অর্থনীতি ও এর প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ইউএসএআইডির মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর সমর্থন চেয়েছেন।
এটি খুব দ্রুত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ তার সরকারের পেছনে ‘ঐক্যবদ্ধ’ এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ পুনর্গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের কাছে নতুন বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন আজ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার, দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা, শ্রম ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত ছিল। এটা (দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই) আমার এক নম্বর ইস্যু।’
দেশ থেকে চুরি যাওয়া এবং বিগত সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশে পাচার করা কোটি কোটি ডলার ফেরত পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন তিনি।
পাচার হওয়া সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বিশাল অঙ্কের টাকা। অবিশ্বাস্য!’
এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের সমর্থনের প্রস্তাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা সাহায্য করতে পেরে খুশি। দুর্নীতি মোকাবিলায় আমাদের অনেক দক্ষতা রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শ্রমের মান উন্নয়ন সরকারের অন্যতম শীর্ষ লক্ষ্য, কারণ এটি দেশে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস এবং আগামী বছরগুলোতে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সংস্কার অভিযানে ইউরোপের সমর্থনের ওপর আস্থা রাখুন: ইউনূসকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট
বৈঠকে ইউনূস ও ব্লিঙ্কেন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় নৃশংসতার তদন্তে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা করেন।
ইউনূস বলেন, তার সরকার বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রেখেছে। গণমাধ্যমকে 'যথাসাধ্য' সমালোচনা করতে বলেছেন তিনি।
সরকার দেশে জাতিগত সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবাই একটি বড় পরিবার। আমাদের মতপার্থক্য আছে। কিন্তু আমরা শত্রু নই।’
দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বেড়ে ওঠা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর জন্য সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়াও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যসহ বাংলাদেশে সবার মানবাধিকার রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গঠনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
বৈঠকের পর মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ব্লিঙ্কেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা সব বাংলাদেশির জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থন ও সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে: অধ্যাপক ইউনূস
এসময় তারা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব গভীর করার বিষয়ে নিজেদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস।
বাইডেন ও অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মূলে রয়েছে অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন।
বৈঠকে দুই সরকারের মধ্যে আরও সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নতুন সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অভিনন্দন জানাতে বাইডেন ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নতুন যাত্রা সফল করতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা প্রধান উপদেষ্টার
২ মাস আগে