মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ
মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ: কারণ ও বাঁচার উপায়
তথ্য ও প্রযুক্তির বিরামহীন বিকাশের যুগান্তকারী ফলাফল হচ্ছে স্মার্টফোন। উদ্ভাবনের পর থেকে কেবল দুটো মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এই ছোট্ট ডিভাইসটি। চার দেয়ালের ভেতরে ও বাইরে স্থির বা চলমান প্রতিটি অবস্থায় এই মুঠোফোন মানুষের ২৪ ঘণ্টার সঙ্গী। প্রসঙ্গ যখন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে তখন স্বভাবতই সেখানে চলে আসে সঠিকভাবে তা ব্যবহারের বিষয়টি। কেননা অসাবধানতা বা অপব্যবহারে সময়ের এই আশীর্বাদটিই পরিণত হতে পারে মৃত্যুঝুঁকিতে। বিশেষ করে স্মার্টফোন বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনাগুলো প্রায়ই ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। চলুন, মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের বিভিন্ন কারণ এবং এ থেকে বাচঁতে করণীয়গুলো সম্পর্ক জেনে নেওয়া যাক।
মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের কারণসমূহ
দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া। নথি, হিসাব রক্ষণ, ই-মেইল বা ফাইল ব্যবস্থাপনার মতো হাল্কা অ্যাপগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে নেতিবাচক প্রভাবটা বেশ হাল্কা থাকে। তবে ভিডিও স্ট্রিমিং এবং গেমের মতো ভারী অ্যাপগুলো অল্প সময় চালালেই ডিভাইস গরম হয়ে ওঠে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই অ্যাপগুলোতে ডুবে থাকলে ফোনের প্রসেসরের ওপর যথেষ্ট চাপ পড়ে। এতে করে ফোনের অভ্যন্তরে তাপ বাড়তে থাকে।
এই উত্তাপের সবচেয়ে বড় শিকার হয় ফোনের ব্যাটারি। তাপের পরিমাণ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে গেলে ব্যাটারি ফুলে গিয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে পড়ে।
উন্নত প্রযুক্তির ফোন মানেই তাতে হাই-এন্ড প্রসেসরের উপস্থিতি। আর অবিরাম ফোন ব্যবহারের ফলে এই প্রসেসরগুলো মুহুর্তে উত্তপ্ত হয়ে যায়। প্রসেসরের একদম সংস্পর্শে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ব্যাটারির।
আরও পড়ুন: অ্যাপল আইফোন ১৬ সিরিজে নতুন কি থাকছে
ওভারচার্জিং
ফোনের চার্জ ১০০ শতাংশের কোঠায় পৌঁছানোর পরেও দীর্ঘক্ষণ প্লাগ-ইন থাকলে ব্যাটারিতে লোড বাড়তে থাকে। অবশ্য বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ স্মার্টফোনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যেন একবার পূর্ণচার্জ হয়ে গেলে চার্জ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরেও ক্রমাগত চার্জ গ্রহণেরও একটা লিমিট আছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে প্লাগ-ইন অবস্থায় থাকলে সেই লিমিট অতিক্রান্ত হয়। আর তখনি ব্যাটারির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে।
‘ব্যাটারি স্ট্রেস’ নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়াটিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলো একটু একটু করে তাপ জমা হতে শুরু করে। চক্রাকারে এই ঘটনা ঘটতে থাকলে এক সময় সেগুলো অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়।
অনেকেরই মধ্যে রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমাতে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া ব্যাগের মধ্যে পোর্টেবল চার্জারে ফোন সংযুক্ত রেখে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
উত্তপ্ত বা উচ্চ আর্দ্রতার পরিবেশে রাখা
সরাসরি সূর্যের আলোতে, বদ্ধ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ অথবা প্রচন্ড আঁটসাঁট চাপযুক্ত জায়গা ফোনের ব্যাটারির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবেশের উচ্চ তাপ ফোনের কেসিং হয়ে ব্যাটারিতে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে ব্যাটারি তাপ ধারণ করার জন্য প্রসারিত হওয়ার চেষ্টা করে। এভাবে এটি ক্রমশ নিরাপদ সীমার বাইরে পরিচালিত হয়ে বিস্ফোরণের দিকে ধাবিত হয়।
আরও পড়ুন: ডিএসএলআর ক্যামেরা খুঁজছেন? কেনার আগে জেনে নিন ফিচার ও দাম
উচ্চ আর্দ্রতা যুক্ত পরিবেশ ব্যাটারির জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে ফোন বহনের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন-
- গরমের দিনে পার্ক করা গাড়ির ভেতরে ফোন রাখা
- বালিশ বা কম্বলের নিচে ফোন রেখে ঘুমানো
- ফোন টেবিলের কোণে বইয়ের স্তুপ বা জঞ্জালের মাঝে রাখা
- ফোন একসঙ্গে কয়েকটি হাই-ভোল্টেজের যন্ত্রপাতির সঙ্গে রাখা
- গাড়ির ইঞ্জিন বা গিয়ারের কাছাকাছি প্রচন্ড ভিড়ের মাঝে আঁটসাঁট কোনও ব্যাগে ফোন বহন করা
নকল বা নিম্নমানের চার্জার বা কেবল ব্যবহার করা
সস্তা ও অনিবন্ধিত অধিকাংশ ফোনেই চার্জার বা কেবলগুলোতে কোনও নিরাপত্তার মান থাকে না। এক্ষেত্রে চার্জার বা তার ক্যাবল ফোনের রেটিংকৃত বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য উপযুক্ত থাকে না। ফলে ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে ক্যাবল বা চার্জারটি থাকে একদমি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে করে প্রয়োজনের তুলনায় কম অথবা বেশি পরিমাণে ফোনে বিদ্যুৎ ঢুকতে পারে।
আরও পড়ুন: হ্যাকিং প্রতিরোধ: অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধানতা
কম হলে ফোনের আভ্যন্তরীণ সরঞ্জামাদি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এতে আর তেমন কোনো ভয় থাকে না। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিবহন বেশি হলে তাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে আগুন ধরে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
বাহ্যিক আঘাত থেকে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
ব্যাটারি যদি নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় তাহলে শর্ট সার্কিটের মতো বিপজ্জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। বড় রকমের দুর্ঘটনার জন্য একটি শর্ট সার্কিট-ই যথেষ্ট।
একটি দুর্বল মানের ফোন হাত থেকে পড়ে যাওয়া কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় এর ব্যাটারি। খুব ভালো বিল্ট কোয়ালিটির ফোনও দুই-তিনবার ধাক্কা লাগার ফলে এর আভ্যন্তরীণ কাঠামো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রতিবার আঘাতে একটি-দুটি করে চিড় বা কাঠামো-বিকৃতি দীর্ঘ মেয়াদে ফোনের স্থায়িত্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রচন্ড সংঘর্ষ বা আঘাতে অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপকরণগুলো নষ্ট হতে থাকলে সার্কিট পূরণ সংক্রান্ত সংকট তৈরি হয়। এরপরেও এমন ক্ষতিগ্রস্ত ফোন নিয়ে চলাফেরা করা মানেই যে কোনো সময় আকস্মিক বিপদের সম্মুখীন হওয়া।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনে ভূমিকম্প সতর্কতা চালু করবেন যেভাবে
১ মাস আগে