পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যা আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত কাজ করবে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “কিছু এলাকা ‘নো ব্রিকফিল্ড জোন’ ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বায়ুদূষণের সমাধান সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। তাই জনগণকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড নয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুন: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
তিনি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরোনো গাড়ি অপসারণ করা হবে এবং রাজধানীতে খোলা ট্রাক প্রবেশের বিষয়ে পুলিশকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুদূষণের প্রধান উৎস চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্মাণকাজের ধুলা, ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইন বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জোরদার করার মাধ্যমে বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্মাণকাজে ধুলা কমাতে পানি ছিটানো, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা এবং সুরক্ষা বেষ্টনী ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ট্রাকের মাধ্যমে রাস্তা পরিষ্কার এবং দ্রুত সড়ক মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
পাশাপাশি, রাস্তার ধারে ঘাস লাগানো, নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলা এবং বর্জ্য পোড়ানো বন্ধের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, খাল উদ্ধার এবং উন্মুক্ত জায়গায় খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের পরিবেশের মানোন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) সভাপতিত্ব করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরপেক্ষ-নির্ভীক সাংবাদিকতা অপরিহার্য: রিজওয়ানা হাসান
১ সপ্তাহ আগে
হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণে আনতে ডিসেম্বর থেকে জরিমানা
পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকে হর্নমুক্ত করতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে, পরে পুরো ঢাকা শহর এবং ধীরে ধীরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ পরিকল্পনা জানালেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
হর্ন বাজানোর নিয়ন্ত্রণে বিধিতেও পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের শুরুতে পুরো ঢাকা শহরকে নীরব এলাকা করতে কর্মসূচি নেওয়া হবে। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে, পরে পুরো ঢাকা শহর এবং ধীরে ধীরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
রিজওয়ানা বলেন, হর্ন বাজানোর দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন করতে প্রথমে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। এরপর আইনের প্রয়োগ। হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতে ডিসেম্বর থেকে জরিমানা কার্যকর করা হবে। প্রথমবার আইন ভঙ্গ করলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার করলে আরও বেশি টাকা জরিমানা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, জরিমানা কার্যকর করার আগে সব ধরনের গাড়ি চালক ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করা হবে। হর্ন বাজানো দীর্ঘদিনের অভ্যাস তাই এটি পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, যানবাহনে অহেতুক হর্ন, যত্রতত্র সাউন্ড বক্স, মাইকের মাধ্যমে উচ্চ শব্দ সৃষ্টি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এসব মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।
তিনি বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে অন্যান্য দূষণের পাশাপাশি শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার এখনই সময়। ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন ও বিধি বাস্তবায়ন ও অতিরিক্ত শব্দ করা থেকে বিরত থাকার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে।
রিজওয়ানা মনে করেন, হর্ন বাজানো ও শব্দদূষণ বন্ধ করতে সবচেয়ে জরুরি হলো সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি নিজেকে সচেতন করি, প্রতিটি চালক তার এই পুরনো অভ্যাস বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে তাহলে দ্রুত হর্ন বাজানো ও শব্দদূষণ বন্ধ করা যাবে। সেজন্য জরিমানা করার আগে আগামী কয়েকদিন ব্যাপক আকারে সচেতনতার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চালকদের হর্ন না বাজাতে উৎসাহিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান পরিবেশ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সহায়তা বাড়াবে চীন: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
তিনি জানান, লাইসেন্স নবায়নের শর্ত হিসেবে হর্ন বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এছাড়াও উপদেষ্টা বলেন, ঢাকায় যানবাহনের হর্নের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি কমছে। শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্নায়ুরোগ সৃষ্টি করতে পারে।
শব্দদূষণের বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জনগণকে ব্যাপকভাবে বধির হওয়া থেকে রক্ষা করতে শব্দদূষণ বন্ধ করতেই হবে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পকে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শব্দদূষণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে হর্ন ছাড়াও মাইকিং, বিজ্ঞাপন, কন্সট্রাকশনসহ বিভিন্নভাবে শব্দদূষণ হচ্ছে। হর্ন বন্ধ ছাড়াও সকল শব্দ বা সাউন্ড বন্ধ করা করতে হবে। নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে আমাদের ‘কম শব্দযুক্ত’ দেশে থাকতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, অনেক ড্রাইভার হর্ন বাজিয়ে পাশের মানুষকে বিরক্ত করেন। আমরা যদি বাস, ট্রাক বা গাড়িতে অপ্রয়োজনীয় হর্ন না বাজাই, তাহলে অনেক মানুষের স্বাস্থ্যহানি রোধ করা সম্ভব।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, রেড লাইট থেকে গ্রিন লাইটে আসলেই সব গাড়ি হর্ন বাজানো শুরু করে। এটা উচিত নয়। হর্ন বাজানোর আগে ভাবতে হবে, এটি জরুরি কি না। সকল ড্রাইভারকে হর্ন না বাজানোর জন্য সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে, বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়ার সময় রিকশায় যে শব্দ হয়, তাতে অনেক সময় কানের সমস্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্মে উচ্চস্বরে নয়, নিচু করে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে মানুষের বিরক্তির কারণ না হয়। আমরা মনে করি যে যত জোরে কথা বলতে পারি, সে তত শক্তিশালী। কিন্তু আসলে যুক্তিপূর্ণ কথা বলাই আসল ক্ষমতা। আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবর্তন আনলেই সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
এদিকে ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং হর্ন বাজালে কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ইউএনবিকে জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর সম্মুখস্থ ৩ কিলোমিটার মহাসড়ক হর্নমুক্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিমানবন্দরের উত্তরে স্কলাস্টিকা পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে লা মেরিডিয়ান পয়েন্ট পর্যন্ত নীরব এলাকা।
এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় শব্দদূষণ রোধে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা কার্যক্রমকে সফলভাবে বাস্তবায়নের নানা কার্যক্রম চালায় বেবিচক ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের তদন্ত দলের প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশে সংস্কার আনা হবে: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
২ মাস আগে