বদরুদ্দোজা চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ওমেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)
তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ২ মেয়ে এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বি. চৌধুরীকে উত্তরা ওমেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেদিন বি. চৌধুরীর মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তার বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজেস ভুগছিলেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে।
বি. চৌধুরী একজন কৃতি ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।
বি. চৌধুরী যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস।
তিনি রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রোগ বিজ্ঞান বিষয়ে টিভি অনুষ্ঠানের রেকর্ড অর্জনকারী উপস্থাপক। সফল পার্লামেন্টেরিয়ান বি. চৌধুরী জাতিসংঘে তিন বার বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
বি. চৌধুরী ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তার সহধর্মিনী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। অধ্যাপক চৌধুরী দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা ওমেন মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী. বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
৪ সপ্তাহ আগে
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তার মেয়ে শায়লা চৌধুরী জানান, বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে তাকে উত্তরা মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি বলেন, 'আমার বাবার ইসকেমিক হৃদরোগ রয়েছে এবং ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অপর্ণা রহমান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মারুফ বিন হাবিব ও তার মেয়ে শায়লা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বদরুদ্দোজা চিকিৎসাধীন বলে তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান।
৯৪ বছর বয়সি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের ২১ জুন পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীক (বিএনপি) নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার সরকারের সময় তিনি শিক্ষামন্ত্রী এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৬ সালে বিএনপি বিরোধী দলে থাকাকালে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন।
১৯৭৮ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে জিয়াউর রহমানের সরকারের সময় উপপ্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৪ সালের ৮ মে তিনি 'বিকল্পধারা বাংলাদেশ' নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি বর্তমানে দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর জন্ম নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
১ মাস আগে